Image description
 

চলমান এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে বিষয়প্রতি সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা চুক্তিতে নকল সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। প্রশ্নপত্র দেয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলে বাহিরে অবস্থানরত বিভিন্ন মাধ্যমে শুরু হয় প্রশ্নপত্র সমাধানের প্রতিযোগিতা। এরপর বিভিন্ন কৌশলে পরীক্ষার হল রুমে আসে উত্তরপত্র। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে চলমান এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ছয়টি বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই সক্রিয় হয়ে উঠে নকল সিন্ডিকেট। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, গণিত, রসায়ন, পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানসহ ছয়টি বিষয়ের প্রতিপত্রে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার চুক্তিতে কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের যোগসাজশে নকল সরবরাহ করা হয় পরীক্ষার হল রুমে।

চলমান এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই ‘মিঠাপুকুরে এসএসসি পরীক্ষার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর এই কেন্দ্রটিতে শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই জন ট্যাগ অফিসার দেয়া হয়। প্রশাসনের কঠোরতায় বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এরপর ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র এবং গণিত পরীক্ষায় পুনরায় চুক্তিতে নকল সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানায়, পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম নিজের পছন্দমতো শিক্ষককে দিয়ে কেন্দ্রের ডিউটি বণ্টন করে দেন। পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর বের করে অফিস রুমের প্রিন্টারে উত্তরপত্র তৈরি করা হয়। পরে কেন্দ্রসচিবের নির্দেশনায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হায়দার, অলি, রায়হান, সোহাগী ও শিক্ষক মুসার মাধ্যমে পরীক্ষার হল রুমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়।

হল রুমে ডিউটিরত শিক্ষকদের কেউ অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব সামলান, আর কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে পাহারা দেন। এ সময় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার আসলে সিগনাল দেয়া মাত্রই নকল লুকিয়ে ফেলে শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রসচিবের নেতৃত্বে এই অনিয়ম বাস্তবায়ন করে স্কুলের নাইটগার্ড হায়দার। নাইটগার্ড হয়েও অফিস সহকারীর দায়িত্বসহ কেন্দ্রসচিবের নানাবিধ অনিয়মের নেতৃত্ব দিতে পুরো কেন্দ্রজুড়েই বিচরণ থাকে হায়দারের।

এদিকে হলে প্রশ্নপত্র দেয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপরেই বাহিরে অবস্থানরত বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও স্কুলের শিক্ষকরা মিলে শুরু হয় প্রশ্নপত্র সমাধানের প্রতিযোগিতা। প্রশ্নপত্র সমাধান করে নিকটবর্তী ভানজেরমোড়, বৈরাগীগঞ্জ, জায়গীরহাট, মাঠেরহাট থেকে ফটোকপি করে দেড় ঘণ্টার মধ্যে পরিদর্শনের নামে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, তথাকথিত সাংবাদিক এবং চা-নাস্তা নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাধ্যমে উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বহিরাগতরা কলেজের পিছনে সেপটিক ট্যাংকের পাইপ দিয়ে উঠে সংশ্লিষ্ট কক্ষের জানালা দিয়ে ও দেয়ালের পাশে পরীক্ষার্থীকে বলে রাখা নির্ধারিত স্থানে উত্তরপত্র রেখে আসে।

সরেজমিনে আজ সোমবার বেলা ১২টায় পায়রাবন্দের সেই পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের মূল ফটকে তালা দেয়া। কেন্দ্রের আশপাশ থেকে ভিতরে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা চলছে। এ সময় স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে বেশ কয়েকজনকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরপত্রের ফটোকপিসহ আটক করা হলেও রাজনৈতিক নেতার মধ্যস্থতায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহেদুল আলম জানান, আমার এই কেন্দ্রে দুইজন ট্যাগ অফিসার আছেন। এখানে নকল করার কোন সুযোগ নেই। কিছু অসৎ ব্যক্তি অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে আমার নামে মিথ্যাচার করছে।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো নকল মুক্ত করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে লটারির মাধ্যমে শিক্ষকদের ডিউটি ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। পায়রাবন্দ কেন্দ্রের বাহিরে নকলসহ যুবক আটক হওয়ার ঘটনা শুনেছি। তবে প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে অবগত না করায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।