Image description

Maskwaith Ahsan (মাস্কওয়াইথ আহসান)


সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের উক্তি হিসেবে ‘একাত্তরের রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে’ শিরোনামে অনেকগুলো সংবাদ ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভায় তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে সংবাদগুলোতে উল্লেখ করা হয়। আদতে উপদেষ্টা এমন কোনো বক্তব্যই দেননি বলে বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে শনাক্ত হয়েছে।
 
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, উপদেষ্টা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরের ৫০ বছরের রাজনীতিতে ভুল ছিল বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
 
তিনি বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তাঁদের সুস্থ করতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের খালি হাতে খালি পায়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। দেশটাও গত ৫০ বছরে গড়েই উঠল না। গণতন্ত্র, সাম্য, সমাজতন্ত্র, ন্যায়বিচার—সবই আড়ালে থেকে গেল। আমাদের রাজনীতি নিশ্চয় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেই রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে।’ ......
 
উপদেষ্টা মুরশিদের বক্তব্য থেকে " একাত্তরের রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে" বলে যে শিরোনাম নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিডিয়া; এটা আসলে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে মিডিয়া যেভাবে শিরোনাম ও খবর প্রকাশের প্রশিক্ষণ নিয়েছে; তারই স্থিতিজড়তা। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে আজ অবধি যারা ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা অনুসরণ করেছেন; তারা বাংলাদেশের মিডিয়ায় ইয়াসমিন মুরশিদের বক্তব্যকে ওভাবে প্রকাশের প্যাটার্নের সঙ্গে মিল খুঁজে পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধে যাদের পরিবারে রক্ত-ত্যাগের ইতিহাস নেই, যারা শরণার্থী জীবনের বেদনার অভিজ্ঞতা পাননি, বয়স মুক্তিযুদ্ধে যাবার উপযুক্ত হবার পরেও আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে থেকে ১৬ ডিসেম্বর মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে বিজয় মিছিল করেছেন; তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তিতে বিভাজিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প লিখে এরপর বলেছেন, যে উড়োজাহাজ পাকিস্তানের ওপর দিয়ে উড়ে যায়; আমি তাতে চড়িনা। মুক্তিযুদ্ধে রক্ত ত্যাগ না থাকলে তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মালিকানা জাহির করতে আগ বাড়িয়ে রোয়াব দেখাতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরাপদে ঢাকায় থেকে পাকিস্তানের সরকারি সুবিধায় হাসপাতালে নিয়মিত চেক আপ করিয়ে দেবশিশু ডাউনলোড করলে তখন যত্রতত্র শিশু-কিশোর-তরুণদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে তকমা দেয়া যায়।
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলোকস্টে পরিবারের ত্যাগ রয়েছে; এমন মানুষেরা দেখবেন প্যালেস্টাইনের গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার। আর সেসময় আরাম আয়েশে বৃটেনে বসে যারা ন্যারেটিভ বা বয়ান তৈরি শিখেছিলেন, তারা ১৯৪৮ সাল থেকেই প্যালেস্টাইনে নাকবা গণহত্যা শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব পরিবারের ত্যাগ আছে, যারা সম্মুখ সমরে ছিলেন; তারা বাংলাদেশে যে কোন মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় আরামে থেকে যারা বয়ান তৈরি করা শিখেছিলেন, তারা ২০০৯-২৪ আওয়ামী লীগের সমস্ত মানবতা বিরোধী অপরাধের জাস্টিফিকেশন দিয়েছেন। হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের দেশ লুন্ঠনকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
 
বঙ্গবন্ধুর নৌকা যাদের এলাকার ঘাটে সামান্য যাত্রাবিরতি করেছিলো; তারা মুজিব বন্দনার বই লিখে ক্ষমতায়িত হয়েছিলো। পাওয়ার করিডোরে পুচ্ছ দুলিয়ে ঘুরতে শুরু করেছিলো। তারা মিডিয়ার লাইসেন্স নিয়ে গরিবের ছেলেদের সাংবাদিকের চাকরি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার টুল দিয়ে ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তী টিকিয়ে রাখার প্রচারণা চালিয়েছিলো। জুলাই বিপ্লবের পর সেসব সাংবাদিকদের মাঝে ষাঁড় ও গাভিগুলোর চাকরি চলে গেলেও রয়ে গেছে বাছুরগুলো। সেই বাছুরগুলো শিখেছে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেল দিয়ে তাওয়া গরম করে তাতে আওয়ামী পরোটা ভেজে নিতে হয়। ইয়াসমিন মুরশিদের বক্তব্য থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেল বের করে তা দিয়ে আওয়ামী লীগের পরোটা ভেজেছে ১৫ বছর ধরে প্রশিক্ষিত বাছুর সাংবাদিকগুলো; যারা বড় হয় না; রয়ে যায় একই রকম মানসিক বয়সে। আর ফেসবুকে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের ক্লার্ক হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়া জগলুল ও জগন্নাথের নাতি-নাতনি সহমত-শিবব্রত-ললিতা-আনারকলি। এরা মাথায় পতাকা বেঁধে শাহবাগে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মালিকানা পেয়েছে। বুবুর আশীর্বাদে মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলীর সঙ্গে ১০৮ টা নীলপদ্ম সংগ্রহ করেছে। ফলে শৈশবে যে চৌধুরী বাড়ির শিশুদের কাঠি লজেন্স আনন্দে হাসতে দেখেছিলো; তাদের গালাগাল করে প্রতিশোধ নিয়েছে।
 
ইয়াসমিন মুরশিদের আভিজাত্যে দূর থেকে যারা ঈর্ষান্বিত হয়েছে; তারা পাকিস্তান আমলে স্বাধীন বাংলাদেশ আন্দোলনের সঙ্গে মুরশিদ বাড়ির যে সম্পর্ক; এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে তাদের যে অবদান; এসব কিচ্ছুর খোঁজ খবর না রেখে; ভাবলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেলে হাসিনা পরোটা ভেজে নেবে; মুরশিদকে মিস কোট করে একটা মনপছন্দ শিরোনাম বসিয়ে ঈদুল ছাপড়ি রচনা করবে।
 
এতো সহজ কি হয়; ইয়াসমিন মুরশিদ পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট কোন কথা কখনো বলবেন না; কারণ তিনি ছয় বছরে টেনে কষে বিএ পাশ করেননি। নিজের পরিবারের সুকৃতি ভাঙ্গিয়ে স্বাধীনতার সুফল কুড়াতে যাননি। জীবনে যতটুকু কাজ করেছেন তা নিজ যোগ্যতায় করেছেন; আর গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের লক্ষ্য সারাজীবন কাজ করেছেন।
 
এই যে বাছুর সাংবাদিকরা তাকে শিকারের লক্ষ্যে ফালতু রিপোর্ট করেছে; আর যে ছাপড়ি ফেসবুকাররা তা নিয়ে গালিতে বাঙ্গময় হয়েছে; কলতলায় হুটোপুটি খেয়েছে; তাদের এটাও জানা উচিত স্বাধীন বাংলাদেশে মেধাবী প্রজন্ম রয়েছে। যারা অত্যন্ত পেশাগতভাবে নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে দেখে বিষয় বস্তুকে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফ্যাক্টচেকিং করে আওয়ামী বাছুর সাংবাদিকদের অনৈতিক ও অশিষ্ট অপসাংবাদিকতার মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। পি আইবির প্রতি কৃতজ্ঞতা এই দায়িত্ব পালন করায়।
আমি সবসময় ছাপড়িদের বলি, একটু ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে; এক লাফে ইয়াসমিন মুরশিদ হওয়া যাবে না। নিষ্ঠার সঙ্গে সন্তানকে শিক্ষিত করতে হবে। সেই সন্তান বড় হলে; তার ছেলে কিংবা মেয়েটি ইয়াসমিন মুরশিদের মতো পলিটিক্যালি কারেক্ট কথা বলতে শিখবে। সামাজিক গতিশীলতা অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক একটা ব্যাপার। বুবু রাজনৈতিক দীক্ষা দিয়ে তা হয় না।