
রাজধানীতে বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহত শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজের হত্যার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় সাদা শার্ট পরা এক যুবক ছুরি দিয়ে পারভেজকে আঘাত করছেন। এসময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি আশপাশের কেউ। এমনকি নিরাপত্তাকর্মীরাও।
এক পর্যায়ে নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করেন পারভেজ এবং পরে তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সিসিটিভিতে ছুরিকাঘাত করতে দেখা যাওয়া যুবকটি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন বলে একাধিক শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেছেন।
এই দিকে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বরাদ দিয়ে জানা যায়, যখন মীমাংসার জন্য সবাইকে ডাকা হয়েছিল তখন পারভেজ প্রক্টরকে বলেছিল ‘স্যার আমি কিছু করিনি আমি শুধু হাসছিলাম।’ এমন তথ্য নিশ্চিত করেন তার সহপাঠীরা।
আইন বিভাগের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাফরাজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের ক্যাম্পাসের নানা সমস্যা বহুদিন ধরেই চলে আসছে। কিছু ঘটলেই বহিরাগতদের এনে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করা হয়। অতীতেও এসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের মাধ্যমে একাধিকবার এ ধরনের ঝামেলা তৈরি করেছে। এরই ফল হিসেবে গতকালের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাহিদুল প্রাইম এশিয়ার গলিতে চা-সিঙ্গারা খাওয়ার জন্য গিয়েছিল। ওই সময় সেখানে দুই জন মেয়েও ছিল। এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী এরাও ছিল।’
তার ভাষ্যে, ‘হঠাৎ করে ছেলেগুলো পারভেজকে বলতেছে তুমি এর দিকে কেন তাকিয়েছ। পরে আমার বন্ধু পারভেজ বললো যে ভাই আমরা এরদিকে তাকাই নি, একপর্যায়ে এটা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় তাদের মধ্যে। তখন স্যাররা তাদেরকে নিয়ে যায় মিটমাট করিয়ে দেয়। এই হলো ঘটনার সূত্রপাত।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার প্রধান তিনজন মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী বিষয়টি দিকে মোড় ঘোরায়। তারা হাজারীপাড়া এলাকার স্থানীয় কিছু টোকাই ছেলেদের নিয়ে আসে এবং জাহিদুলের ওপর হামলা চালায়।
এসময় জাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে দৌড়ে আসার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তারা তাকে ধারালো অস্ত্র আঘাত করে পালিয়ে যায় বলে জানান তারা।
থানা সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ নিহত হন।
টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছেন, জাহিদুলকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে হামলা করা হয়েছে। এসময় তার বুকে ছুরি মেরে তারা তাকে হত্যা করে।
বৈষম্যবিরোধীদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে একই বিভাগের ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন শিক্ষার্থী ছিল ঘটনার সময় তবে তারা হামলার সাথে জড়িত কি না সেটা আমাদের জানা নেই।’
এই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পেটে হাত রাখা অবস্থায় পারভেজকে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তার আশপাশে কয়েকজন উদ্বিগ্ন অবস্থায় তার সাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় পরে জাহিদুলকে উদ্ধার করে সহপাঠীরা তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে পারভেজকে বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। রবিবার (২০ এপ্রিল) জাহিদুলের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত জাহিদুলের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী ছাড়াও আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
ওসি সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘মোট আসামি আটজন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ ছাড়া এ তালিকায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি এবং তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে।’