
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকার কোনো হদিস মিলছে না। সেই টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, এর কোনো তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিতে পারেনি। বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতের এমন অভিযোগ উঠে এসেছে সরকারের শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে।
২০২২-২০২৩ নিরীক্ষা বছরের প্রতিবেদনটি আমাদের সময়ের হাতে এসেছে। ঋণ পরিশোধের কথা বলে অর্থ সরানোর বিষয়টি ওই প্রতিবেদনের ৮৫ পৃষ্ঠায় ৪৬ নম্বর অডিট অনুচ্ছেদে উঠে আসে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ঋণ গ্রহণ বাবদ প্রাপ্তি না দেখানো হলেও ঋণ পরিশোধের নামে বাজেটে অতিরিক্ত ব্যয় প্রদর্শন করা হয়েছে ৫৫২৯১৪০০০ টাকা’ শিরোনামে ওই অনিয়ম তুলে ধরা হয়।
শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা দলটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্তে এসেছিল ২০২২ সালের ১১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সুলতান-উল-ইসলাম টিপু ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মো. হুমায়ুন কবীর ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। তাদের সময়ই বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয় করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ তুলেছেন, তৎকালীন প্রশাসন ওই টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাই এ সম্পর্কে কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি। এ বিষয়ে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা দরকার।
বিষয়টি জানার পর হিসাব শাখার সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য চেয়েছেন বর্তমান উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতাধীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ঋণ গ্রহণ বাবদ প্রাপ্তি না দেখানো হলেও ঋণ পরিশোধের নামে বাজেটে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় প্রদর্শন করা হয়েছে।’
‘ভুয়া’ ঋণের খাত দেখিয়ে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা সরানোর ব্যাখ্যা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন নিরীক্ষা দলকে জানায়, ‘চাহিদা মাফিক বরাদ্দ না পাওয়ায় বাজেট ঘাটতি থাকে। করোনাকালীন আর্থিক সংকটের সময়ে বাজেট ঘাটতি পূরণে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধের ভাউচারসহ ব্যাখ্যার আলোকে আপত্তিটি নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুলস বিধি ৯ অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থ বছরের অনুমোদিত মঞ্জুরি এবং উপযোজনে কোনো ব্যয় অন্তর্ভুক্ত না থাকলে এবং সরকার অথবা সরকার থেকে এ বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সাধারণ কিংবা বিশেষ নির্দেশাবলীর মাধ্যমে ব্যয় মঞ্জুর করা না হলে কোনো কর্তৃপক্ষ সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় সাপেক্ষে কোনো দায় গ্রহণ কিংবা ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে না।’
ঋণ পরিশোধের কথা বললেও এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন কোথায় খরচ করেছে, তার সঠিক খাত দেখাতে পারেনি। তৎকালীন প্রশাসনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি নিরীক্ষা দল।
তাই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয় যে, ‘ব্যয়ের যথার্থতা নিরূপনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অধিকতর অনুসন্ধানপূর্বক কারণ উদ্ঘাটন ও এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু আমাদের সময়কে বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছে, সেটা তারাই প্রমাণ করুর। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করব না। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।’
বিপুল অর্থের হদিস এখনো কেন দিতে পারেননি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য বলেন, ‘সেটা তো আমার জানা ওভাবে নেই। কাগজপত্র দেখতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ কোটির বেশি টাকা তৎকালীন প্রশাসন আত্মসাৎ করেছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘হতে পারে। সেটা এখন দেখার বিষয়। এই মুহূর্তে চূড়ান্ত কিছু বলতে পারব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি কাগজপত্র তলব করেছিলাম। কাগজপত্রগুলো তারা এখনো আমাকে দিতে পারেনি। যেহেতু বড় অঙ্কের ব্যাপার। কাগজপত্র পাইনি বলেই এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।