Image description

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৫ কোটির বেশি টাকায় নেওয়া শতাধিক প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার ও উপজেলা প্রকৌশলী আয়েশা আখতার নিয়ম-বহির্ভূতভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এই অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি আড়াল করতে প্রকল্পের কাগজপত্র কার্যালয় থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পগুলোর জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিয়মিত রাজস্ব তহবিল ও উদ্বৃত্ত রাজস্ব তহবিল থেকে সরকারি অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কাজ না করে অর্থ লোপাট করা হয়। যদিও উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরাসরি রাজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ নেই। সেই নির্দেশিকার বাইরে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবরের মাসিক সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকার ৫৯টি, দর দেওয়ার অনুরোধের (আরএফকিউ) মাধ্যমে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকার ৩৯টি ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় ৯৯ লাখ টাকার ১৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

আরএফকিউ প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যালয় ভবন, ডরমিটরি, আবাসিক ভবন, ইউএনওর বাসভবন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, বৃক্ষরোপণ ও শাকসবজির বাগান করায় অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। যদিও উপজেলা পরিষদ ম্যানুয়াল অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও সরেজমিনে পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষদের সীমানা দেয়ালে রং করা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি।

অন্যদিকে পিআইসির আওতায় মাইজবাগ ইউনিয়নের চরশংকর গ্রামে নয়ন মিয়ার বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্প বসানোর জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও তা আত্মসাৎ করা হয়। পুরো ইউনিয়নে এমন ছয়টি প্রকল্পের একটি কাজও হয়নি। উপকারভোগীরা জানেন না যে তাঁদের নামে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল।

নয়ন মিয়া বলেন, ‘শুনছি, আমার নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এসেছিল, কিন্তু কল তো পেলাম না। যারা আমার মতো গরিবের হক মেরে খেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ নিয়ে কথা হলে প্রকল্পের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ মিয়া বলেন, ‘পিআইসির মাধ্যমে আমার ইউনিয়নে কোনো কাজ হয়নি। সেখানে টাকা তোলার তো প্রশ্নই ওঠে না। এখন শুনছি, ছয়টি প্রকল্পের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু আমার কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। এমনটি হয়ে থাকলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

একইভাবে তারুন্দিয়া ইউনিয়নে ৭ লাখ টাকার পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে ছিল আড়াই লাখ টাকায় অফিস মেরামত ও ল্যাপটপ কেনা। তারুন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি মাহমুদ হাসান রানা বলেন, ‘পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে ড্রেন নির্মাণের দুটি প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ল্যাপটপ এবং অফিস মেরামতের বরাদ্দের বিষয়ে আমি অবগত নই।’

পিআইসির আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা ছিলেন সাবেক ইউএনও সারমিনা সাত্তার এবং সদস্যসচিব ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী আয়েশা আখতার।

জানতে চাইলে বর্তমানে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা আয়েশা বলেন, ‘কোন প্রকল্পে কী হয়েছে, এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’ এই বলে তিনি ফোনকল কেটে দেন এবং পরে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে বর্তমানে নান্দাইলের ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সারমিনা বলেন, ‘কাজ চলাকালে আমার বদলি হয়েছে। পরে প্রকল্পের কী হয়েছে না হয়েছে, সেটা আমার জানার বিষয় নয়।’

এ বিষয়ে কথা হলে ঈশ্বরগঞ্জের বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের নামে টাকা উত্তোলন হয়েছে। লোকজন এসে বর্তমান ইউএনওর কাছে অভিযোগও করেছেন বলে শুনেছি। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য প্রকল্পের সভাপতিদের তিনি চিঠিও দিয়েছেন। তবে আমি অফিসে প্রকল্পের কোনো কাগজপত্র পাইনি।’

যোগাযোগ করা হলে ঈশ্বরগঞ্জের বর্তমান ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘আমি যোগদানের পর আত্মসাৎ করা প্রকল্প বাতিল করে নতুন প্রকল্প দিয়েছি। তারা কাজ না করে কীভাবে টাকা উত্তোলন করেছে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। উপজেলা পরিষদের ভেতর-বাইরে কী কাজ হয়েছে, আপনারা তো নিজের চোখেই দেখছেন। আমার বলার কী আছে।’