
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে বিশেষ আইন করা হয় এবং মামলার বিচারকাজ শেষ করার জন্য ১৮০ দিন সময়ও বেঁধে দেওয়া হয় । অথচ সারা দেশের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের দেড় লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন । এর মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে পাঁচ বছরের বেশি সময় । নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারকাজ হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে , দেশে এই ট্রাইব্যুনাল রয়েছে ১০১ টি । বিচারকদের সংগঠন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এসব মামলার বিচারকাজ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরও ২০০ টি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে । জানতে চাইলে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সালমা আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন , মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ প্রসিকিউশন নিয়োগ দেওয়া উচিত । তদন্তকারী কর্মকর্তা , প্রসিকিউশন ও বিচারকের মধ্যে সমন্বয় ও সদিচ্ছা থাকতে হবে । সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে । বিচারে দেরি হলে অনেক
সময় সাক্ষ্য - প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায় । তাই আইনে উল্লিখিত প্রতি কার্যদিবসেই একটানা বিচার করতে হবে । সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , সারা দেশের আদালতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মামলা
বিচারাধীন ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭ টি । এর মধ্যে ঢাকার ৯ টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেই ছিল ১৫ হাজার ২১৩ টি । পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৭২ টি । এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ১ হাজার ৬০৭ টি মামলার বিচারকাজ । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০ ( ২ ) ধারায় বলা হয়েছে , ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা চলবে । ২০ ( ৩ ) ধারায় বলা হয়েছে , মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে । এদিকে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর মৃত্যুর পর ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার । গত ২৫ মার্চ ওই সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয় ।
সংশোধিত আইনে ২০ ( ৩ ক ) -তে বলা হয়েছে , এই ধারার অধীন ধর্ষণ- সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে । বর্তমানে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে ১০১ টি । গড়ে প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মামলা বিচারাধীন । এসব ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের এই আইনের মামলার পাশাপাশি শিশু আদালত এবং মানব পাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্বও পালন করতে হয় । দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম অফিসার কোর্টের স্পেশাল মোয়াজ্জেম হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ মামলার তুলনায় ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কম । আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি । শিগগির এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে । '
এদিকে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ১৩ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছে , নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম কারণ মামলার সংখ্যার সঙ্গে সংগতি রেখে পর্যাপ্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল না থাকা । বিবৃতিতে বিদ্যমান মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আরও অন্তত ২০০ টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানানো হয় । জানতে চাইলে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন , বর্তমানে মামলা বিবেচনায় সারা দেশে পর্যাপ্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নেই । এসব ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের শিশু আদালত ও মানব পাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্বও পালন করতে হয় । আবার ট্রাইব্যুনালগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মচারীর পদও সৃজন করা হয়নি । ফলে দেশের ট্রাইব্যুনালগুলো প্রত্যাশামতো কাজ করতে পারছে না । নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দ্রুত বিচারের স্বার্থে পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে ।