
বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণ ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চীন। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনের সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি এক হাজার শয্যার হাসপাতাল উপহার হিসেবে দেবে। স্বাস্থ্য খাতে তাদের এ মহাপরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের দীর্ঘদিন ধরে উপস্থিতি রয়েছে। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো নিয়মিত ওষুধের কাঁচামাল (এপিআই) চীন থেকে আমদানি করে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা মেডিকেল সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে সেখানে থেকে। প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেল পড়াশোনা করতে চীনে যান। করোনাভাইরাসের প্রচুর টিকাও কেনা হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। হাসপাতালটি কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গে একটি চিকিৎসা হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। এ মাসের মধ্যে হাসপাতালের স্থান চূড়ান্ত হতে পারে। বিশেষায়িত টারসিয়ারি হাসপাতালটি দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী অথবা উত্তরবঙ্গের অন্য কোনো জেলায় হতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এ হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। হাসপাতালটি কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গে একটি চিকিৎসা হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। এ মাসের মধ্যে হাসপাতালের স্থান চূড়ান্ত হতে পারে। বিশেষায়িত টারসিয়ারি হাসপাতালটি দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী অথবা উত্তরবঙ্গের অন্য কোনো জেলায় হতে পারে। এ তিন জেলার মধ্যে যেখানে ১২ একর জমি সহজে পাওয়া যাবে, সেখানে হাসপাতালটি নির্মাণ হবে।
আর জেনারেল হাসপাতালটি মিরপুর, উত্তরা বা ধামরাইয়ে নির্মাণ হতে পারে। অন্যদিকে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহতদের পুনর্বাসন সেন্টারটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে দেশে এসে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি বড় মাইলফলক হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেককে বিদেশে যেতে হয়। এটি সময় ও অর্থ—দুইয়েরই অপচয় করে। কিন্তু যদি চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করে, তাহলে দেশের মানুষকে আর বিদেশে ছুটতে হবে না। দেশেই মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে।’
ভারত নির্ভরশীলতা কমবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই যে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের জন্য ইতিবাচক। এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণ একসাথে কাজ করছে। এর ফলে দেশের জনগণ আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ঘটবে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজের আধুনিকায়ন ও সংস্কারে চীনের সম্ভাব্য অর্থায়ন ও চীনা বিনিয়োগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখনো মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অনুলিপি পাইনি। মন্ত্রণালয় আমাদের কিছু জানায়নি। শুনেছি চিঠি এসেছে কিন্তু আমাদের কাছে কিছু আসেনি।’
চীনের অর্থায়নের বিষয়ে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, ‘চীন আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে, মেডিকেলে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও দেয়। তাদের এই সহযোগিতাকে আমরা স্বাগত জানাই।’ ভারতের প্রতি চিকিৎসা নির্ভরতা কমানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চীন যদি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অর্থায়ন করে, তাহলে ভারত নির্ভরতা অনেকটাই কমে যাবে।’
চীনের অর্থায়নের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘চীনের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেলের সংস্কার ও আধুনিকায়ন হলে অনেক সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে। সেবার মান আরও উন্নত হবে।’