Image description

চলতি মাসের শেষদিকে ঢাকা সফরে আসবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তার আগে আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) আসছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।

প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফর বিভিন্ন অঙ্গনে আগ্রহ তৈরি করেছে। এর আগে ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ঢাকা সফর করেছিলেন।

পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা সচিব এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মনে করেন, ইসহাক দারের এই আগমন হবে সৌহার্দ্যপূর্ণ এক সফর, যেখানে উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতার সম্ভাব্য সব পথ অনুসন্ধান করা হবে।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আবদুল কাইয়ুম এ সময় প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও কথা বলেন। তার মতে, ভারত তার পাশে শক্তিশালী ও সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্রের উপস্থিতি কখনো পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি।

ঢাকা-ইসলামাবাদ ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে আবদুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে গভীর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। (ব্রিটিশ শাসনামলে) ১৯০৬ সালে ঢাকাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ, যার মাধ্যমে পরে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠনে সফলতা এসেছিল। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দীর্ঘ ২৪ বছর একসঙ্গে ছিল। দুই দেশই সার্ক, ওআইসি ও কমনওয়েলথ অব ন্যাশনসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকায় সৌহার্দ্যপূর্ণ এক সফর হবে, যেখানে উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতার সম্ভাব্য সব পথ অনুসন্ধান করা হবে।

পাকিস্তান এই সফরকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাইয়ুম বলেন, এটি অতীতের ক্ষোভ ও বিরোধ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।

তিনি ঢাকা-ইসলামাবাদ অতীতের সম্পর্কে তিক্ততার জন্য ভারতকে দোষারোপ করে বলেন, ভারত অতীতের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা হাতিয়েছে। উভয় দেশকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়ারও আহ্বান জানান আবদুল কাইয়ুম।

তিনি এই সফরের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বাড়ানো, নিয়মিত ফ্লাইট চালু করা, পর্যটকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কূটনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করা।

ভারতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশটি কখনোই তার পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে একটি শক্তিশালী ও সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্রের উপস্থিতিকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি।

‘ভারত সব সময় পাকিস্তানের সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর, বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে। যদিও বাংলাদেশ বিশ্বাস ও আদর্শের দিক থেকে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠই থেকেছে। ’

চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রসঙ্গে আবদুল কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে উন্নতি ঘটলে বেইজিং তা স্বাগত জানাবে। কারণ উভয় দেশেরই চীনের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা উভয়েই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (ব্রি)-এর গুরুত্বপূর্ণ উপকারভোগী।

(চলবে...)