Image description
যুগ্মসচিব পদ । এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা একসঙ্গে পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার ঘটনা নিকট-অতীতে আর ঘটেনি ।

যুগ্মসচিব পদে ২০ মার্চ সরকার ১৯৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে। এতে ফ্যাসিবাদ আমলের জেলা প্রশাসক (ডিসি), প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের একান্ত সচিবরা পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ দলনিরপেক্ষ অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ১৮৪ কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন। একটি ব্যাচের এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা একসঙ্গে পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার ঘটনা নিকট-অতীতে আর ঘটেনি। এতে সরকারের পদোন্নতি প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

বঞ্চিতরা বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের সময়ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিতর্কমুক্ত কোনো কাজই করতে পারছে না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। বঞ্চনার বিবরণ দিয়ে কর্মকর্তারা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের কাছে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন। তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদোন্নতির ফের উদ্যোগ নিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এডিডি অনুবিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিসিএস ২৪তম ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তারা কাজ করছেন। কাজ কোন পর্যায়ে আছে এমন প্রশ্নে একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অন্য সব কাজ শিগগিরই শুরু হবে। তবে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি।

জানা গেছে, বিসিএস ২৪তম ব্যাচে মোট কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৪৮ জন। যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া ১৯৬ জনের মধ্যে ১৬৪ জন এ ব্যাচের কর্মকর্তা। তবে এ ব্যাচের আরও ১৮৪ জন পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। ৪৭ শতাংশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেলেও ৫৩ শতাংশ কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন। আগের ব্যাচের অর্থাৎ ২২তম ব্যাচের পদোন্নতি পেয়েছেন ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা। নিকট-অতীতে পদোন্নতি নিয়ে এ ধরনের বঞ্চনার ঘটনা ঘটেনি বলে বঞ্চিতরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদনে উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে তোলপাড় চলছে কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসনে। আগের সরকারের দোসর হিসাবে চিহ্নিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ায় মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে একজন অবসরপ্রাপ্তকে পদোন্নতি দেওয়ায়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গোটা প্রশাসনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অস্থিরতা। নিরপেক্ষ অনেক কর্মকর্তা বঞ্চিত হওয়ায় গোটা পদোন্নতি প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একান্ত সচিব (পিএস) আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ (উপসচিব) এ সরকারের সময়ে প্রথম দফায় পদোন্নতি পেয়েছেন। একইভাবে তৎকালীন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পিএস আমিনুর রহমানের পদোন্নতি নিয়েও সমালোচনা চলছে। তাহলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন কেন প্রয়োজন-এমন প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ।

লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা (উপসচিব) ড. চিত্রলেখা নাজনীন রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষমহলে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি কাউকে পাত্তা দিতেন না। সে সময় রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন না করায় ওই শিক্ষককে তিনি অপদস্থ করেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকারের উচ্চমহলের পরামর্শে তিনি ক্ষমা চেয়ে পার পান। ড. চিত্রলেখাও পদোন্নতি পেয়েছেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সচিব (উপসচিব) শ্রাবন্তী রায় জামালপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও তাকে যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ-সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তার পদোন্নতির নেপথ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবশালী আমলারা ভূমিকা রেখেছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক একেএম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আজম নাসিরের পিএস ড. মঞ্জুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবালকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, উপসচিব ড. মাসুমা পারভীনকেও (অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী-সন্তানসহ বসবাস করেন) যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী সুবিধাভোগী জান্নাতুন নাঈম, মনসুর উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পিএস আনিসুর রহমান, জয়পুরহাটের সাবেক ডিসি আফরোজা আক্তার চৌধুরী, মাগুরার সাবেক ডিসি অহিদুল ইসলাম, সৌদি আরব বাংলাদেশ দূতাবাসে দুই দফায় আট বছর শ্রম কাউন্সিলর মুহাম্মদ রেজা ই রাব্বিকে যুগ্মসচিব পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারের অবসরে যাওয়া এক কর্মকর্তার নামে পদোন্নতির জিও জারি করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অবসরে গেলেও গভর্মেন্ট এমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (জেমস) তার পিআরএল’র তারিখ ২০২৮ সালে লেখা রয়েছে। জেমস দেখে তারা আদেশ জারি করেছেন। এটা ভুলবশত হয়ে গেছে।