
ভারতে থামছেই না সহিংসতা। এরই মধ্যে ওয়াকফো আইনের বিরোধিতা করায় কংগ্রেসকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস শুধু মুসলিম মৌলবাদীদের তোষণ করেছে এবং এই নতুন আইনের বিরোধিতা করে তারা সেটা আবারো প্রমাণ করেছে। হরিয়ানার হিসার বিমানবন্দর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।কংগ্রেসকে ইঙ্গিত করে মোদি বলেন, বিরোধী দল সংবিধানকে কেবল ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি আরো বলেন জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের মূল চেতনা হত্যা করা হয়েছিল শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানী আইনের কথা বলা হয়েছে।
দলিতদের আদর্শ এবং ভারতের সংবিধান রচয়িতা ডক্টর বিআর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী স্মরণ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, তাদের সরকার যে কোন সিদ্ধান্ত এবং নীতিতে বাবাসাহেব আম্বেদকারের সংগ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন তারা কখনো ভুলে যেতে পারেনা কংগ্রেস বাবাসাহেব আম্বেদকারের সঙ্গে কি করেছে। জীবিত অবস্থায় কংগ্রেস তাকে বারবার অপমান করেছে। তাকে দুবার নির্বাচনে হারিয়েছে, কংগ্রেস তাকে সিস্টেমের বাইরে রাখতে চাইতো। ষড়যন্ত্র করে তাকে বাদ দিয়েছিল। মৃত্যুর পরও তার স্মৃতি মুছে ফেলতে চেয়েছিল কংগ্রেস। বাবাসাহেব সমতার পক্ষে ছিলেন আর কংগ্রেস গোটা দেশে ভোট ব্যাংকের রাজনীতির বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে।
আম্বেদকার ধর্মীয় ভিত্তিতে সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নাকচ করেছিলেন বলে দাবি করেন মোদি। তিনি বলেন কংগ্রেসের শোষণ নীতি মুসলিমদেরও ক্ষতি করেছে। কংগ্রেস শুধু কিছু মৌলবাদীকে খুশি করেছে, বাকি সমাজ অশিক্ষিত ও দরিদ্র রয়ে গেছে। এই ভুল দৃষ্টিভঙ্গির সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল ওয়াকফ আইন।
মোদি আরো বলেন, কংগ্রেস রাজনৈতিক লাভের জন্য ওয়াকফো আইনে খামখেয়ালি পরিবর্তন করেছিল যা সংবিধানকেই উল্টে দিয়েছিল। তিনি এই ভোট ব্যাংকের লোভী নেতাদের জিজ্ঞাসা করতে চান তারা যদি সত্যি মুসলিমদের নিয়ে ভাবে তাহলে কংগ্রেস মুসলিম নেতাকে প্রেসিডেন্ট করে না কেন। লোকসভা নির্বাচনে মুসলিমদের জন্য ৫০ শতাংশ টিকিট দেয় না কেন। তারা জিতলে তারা তাদের কথা বলতে পারবে। কিন্তু না কংগ্রেস মুসলিমদের কিছুই দেবে না। বরং সাধারণ নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেবে। কংগ্রেসের উদ্দেশ্য কখনোই কারো মঙ্গল করা ছিল না।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, লাখ লাখ হেক্টর জমি ওয়াকফো সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে। যদি ওয়াকফো সম্পত্তি সৎভাবে ব্যবহৃত হতো তাহলে মুসলিম যুবকদের বাইসাইকেলের চাকা সারিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো না। কিন্তু এই জমির সুবিধা পেয়েছে কিছু ভূমি মাফিয়ারা। এই মাফিয়ারা দলিত, অনগ্রসর শ্রেণী এবং বিধবাদের জমি লুট করেছে। নতুন ওয়াকফো আইনের মাধ্যমে গরীবদের এই লুট বন্ধ হবে। এখন থেকে ওয়াকফো বোর্ড আদিবাসীদের জমি বা সম্পত্তিতে হাত দিতে পারবে না। গরিব ওগ্রসর মুসলিমেরা তাদের অধিকার পাবে। এটি আসল সামাজিক ন্যায়।
এদিকে ওয়াকফো আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের আসাম রাজ্য। গতকাল কাছার জেলার এক বিক্ষোপ সমাবেশে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি এড়াতে জেলা জুড়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কাছার প্রশাসন।
জরুরিভাবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সহিংসতায় এর ১৬৩ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক এ ব্যবস্থা জারি করা হয়। কাছার জেলা প্রশাসন বলছে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং অক্ভ আইনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ থেকে উদ্ভূত জনসাধারণের জীবনের জন্য সৃষ্ট হুমকি বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ একটি নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
আদেশটি সরকারিভাবে অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি যেমন মানববন্ধন, সমাবেশ, ধর্মঘট, ধরণা এবং বিক্ষোবের আয়োজনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।