
ভাগ্য বদলাতে ২০২৪ সালে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান মাগুরার শালিখা উপজেলার সুজন মোল্লা। ভিসায় থাকা কাজ পাননি, পেয়েছেন অন্য জায়গায়। অবৈধ অবস্থায় অনিশ্চিত জীবন নিয়ে প্রবাসে ছুটে চলছেন তিনি।
জাগো নিউজকে সুজন মোল্লা বলেন, ‘কাপড়ের মার্কেটের কথা বলে আমাকে ভিসা দেয়। আমার সঙ্গে চুক্তিতে বলা হয় ৯ ঘণ্টা ডিউটি। এক হাজার ৪০০ রিয়াল স্যালারি। ভিসা, অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমার কাছ থেকে নেয় পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু এসে দেখি কোম্পানির কোনো কাজই নেই। হঠাৎ এমন খবরে আমি ভেঙে পড়ি। এরপর একটা কাজ দেয় সেখানে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা ডিউটি। এত কষ্টের কাজ, আর অমানবিক আচরণ। সাত দিন কাজ করার পর স্যালারি না দিয়ে বাদ দিয়ে দেয়। এরপর কোথাও একদিন, কোথাও তিন দিন এভাবে খাটায়। কোথাও স্যালারি পাইনি। ভাবছি দেশে ফিরে যাব, কিন্তু ঋণের বোঝা থাকায় আর যাইনি। আমার সঙ্গে তিনজন পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে বাড়ি চলে গেছে।’
সুজন বলেন, ‘কিছুদিন এভাবে যাওয়ার পর একটা কোম্পানিতে কাজ দিয়েছে। সেখানে তিন মাস কাজ করার পর এক মাসের বেতন দেয়। এই কাজে মাসে একদিনও ছুটি নেই। অথচ প্রতি বছর ইকামা বানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। সপ্তাহে একদিন ছুটি দেওয়ার কথা। এখন অবৈধ অবস্থায় আছি। যে কোনো সময় আমাকে গ্রেফতার করে পাঠিয়ে দিতে পারে। খুব কষ্ট করে টিকে আছি। দেশে গেলে একেবারে চলে যেতে হবে। নাহলে এখানেও এভাবে কষ্টের মধ্যে দিয়ে চাকরি করতে হবে। এর মধ্যে আবার কখন চাকরি চলে যায় তারও নিশ্চয়তা নেই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আব্দুল কাদের একইভাবে সৌদি আরব গেছেন। চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত ইকামা, ছুটি আর বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও কাজের আশায় ছয় মাস ধরে বেকার রয়েছেন।
আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবেশীর মাধ্যমে ভিসা নিছি। তার প্রতি বিশ্বাস ছিল ভালো ভিসা দিবে সাড়ে চার লাখ টাকায়। পরে এলাকায় তার নামে মামলা করেও বিচার পাইনি। এলাকায় একজন মেম্বার টাকা উদ্ধার করে দেবে বলে আমার বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। তবু টাকা পাইনি। এখন আমার ইকামা করতে গেলে লাগবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। এত টাকা কই পাব? এখন দেখি টুকটাক কাজ করে যতদিন থাকতে পারি।’
শুধু সুজন কিংবা আব্দুর রহমান নন, দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে হাজার হাজার কর্মী বিদেশে গিয়ে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন। কেউবা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দেশে ফিরছেন। কেউ কেউ প্রবাসেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব, ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সাপ্লাই কোম্পানির ভিসা, কথিত ফ্রি ভিসার নামে এবং ভিসা ট্রেডিংয়ের বেড়াজালে পড়ে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী অবৈধ হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
প্রতারিত কর্মীদের তথ্য নেই কারও কাছে
তবে এভাবে প্রতারণার ফাঁদে বিদেশে ঠিক কতজন অবৈধ প্রবাসী রয়েছেন- এই সংখ্যা নেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কাছে। এছাড়া প্রতারিত হয়ে কতজন দেশে ফেরত আসছে, সেই সংখ্যাও নেই সরকারের কাছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনেও অবৈধ অভিবাসী নিয়ে কোনো তথ্য নেই।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম এশিয়া অনুবিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান জাগো নিউজকে বলেন, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা অনেক। যারা বিদেশে যাওয়ার পর নথিপত্রহীন হয়ে যান, তারা বিষয়টি হাইকমিশনকে জানান না। এই কারণে তথ্য নেই। আবার কাজ করতে গিয়ে কারা নথিপত্রহীন হচ্ছেন সেটাও আমরা জানি না। সুতরাং কতজন অবৈধ হয়ে আছেন, এই তথ্য কেউ দিতে পারবে না। তবে অবৈধদের উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রেফতার হয়ে কিংবা কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দেশে ফেরত চলে আসেন।
মোস্তফা জামিল খান আরও বলেন, ইকামা করতে না পারায় ১০ বছর, ২০ বছর এমনকি ৩০ বছর ধরেও বিদেশে আছেন এমন কর্মী রয়েছেন। যাদের সঠিক কোনো কাগজপত্র নেই। এভাবে অবৈধ হয়ে লাখ লাখ শ্রমিক বিদেশে রয়েছেন।
গত বছর ফেরত এসেছে ৮৮৮৬৮ জন
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় এক লাখের মতো নথিপত্রহীন বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফেরত আসেন।
এ বিষয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৮৮ হাজার ৮৬৮ জন অবৈধ বাংলাদেশি ফেরত এসেছেন। যাদের উল্লেখযোগ্য অংশই প্রতারণার শিকার। অধিকাংশ কর্মী গ্রেফতার হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরত এসেছেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম জানিয়েছে, গত বছর সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক অবৈধ হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। দেশটি থেকে ফেরত এসেছেন ৫০ হাজার ২৩১ জন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ৮৬০ জন। এছাড়া মালয়েশিয়া থেকে ছয় হাজার ৯৭১ জন, ওমান থেকে আট হাজার ৫১ জন, দুবাই থেকে সাত হাজার ২২৭ জন, কাতার থেকে তিন হাজার ১২৭ জন, কুয়েত থেকে চার হাজার ৪২৩ জন অবৈধ শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন।
গড়ে উঠছে মোয়ার্চোচা
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্লাটফর্ম) শরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এদের উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফেরতও চলে আসছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে রাতারাতি একটা টার্ম গড়ে উঠছে। এটাকে বলে মোয়ার্চোচা। এই চক্রটি কোম্পানি খোলে, ভিসা বের করে। লোকজনকে প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে আনে, এরপর কাজ দিতে পারে না। এভাবেই চলছে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। সৌদিতে গত বছর পাঁচ লাখ লোক গেছেন। অথচ দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় দুই বিলিয়ন। তাহলে এত লোক কেন পাঠাচ্ছি আমরা? প্রয়োজনের চেয়ে যখন বেশি পাঠানো হয়, তখন দেখা যায়, কাজ নেই। ভিসা বাণিজ্য, সাপ্লাই কোম্পানি, তথাকথিত ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা চলছেই।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার ছয় মাসের মধ্যে ফেরত আসা কর্মীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা বিমা সুবিধা চালু করেছিল। গত দুই বছরে বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে এক হাজার ৯২৬ জন বিদেশ থেকে ফেরত আসেন। যাদের প্রত্যেকে কাজ না পেয়ে ছয় মাসের মধ্যেই পুনরায় দেশে ফেরত আসেন।
গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে কাজ করছেন প্রবাসীরা
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা বেশ কয়েকজন অবৈধ শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, চুক্তি অনুযায়ী কাজ ও ইকামা না পেয়ে অনিশ্চয়তায় চলছেন তারা। বৈধ হতে গেলে লাখ লাখ টাকা লাগবে। তাই বৈধ হতে পারছেন না। অন্যদিকে দেশেও যেতে পারছেন না। এখানে অবৈধ থেকেও কাজের অনিশ্চয়তা, অবহেলা, মানবেতর জীবনযাপন করে কোনো রকম কাজ করছেন তারা। এভাবে করে পরিবারের জন্য কিছু টাকা তারা দেশে পাঠাচ্ছেন।
সৌদি আরবে নথিপত্রহীন এক প্রবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাকে সাপ্লাই কোম্পানিতে আনছে, বলছে ইকামা করে দেবে। পরে দালাল ধরেও আর ইকামা করতে পারিনি। যে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছি সেটাও শোধ হয়নি। এখন এ অবস্থায় দেশে গেলে একবারে যেতে হবে। আবার এখানে থাকলে এভাবেই বছরের পর বছর পার করতে হবে। মনে চাইলেও বউ-বাচ্চা, মা-বাবার যেতে পারবো না। আবার কোন সময় গ্রেফতার হয়ে যাই তারও ঠিক নেই। এভাবেই চলছি আজ দুই বছর।’
সৌদি আরবের রিয়াদের একটি গলিতে থাকেন বাংলাদেশি কর্মী সজীব (ছদ্মনাম)। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাপ্লাই কোম্পানির ফাঁদে পড়ছিলাম। স্যালারি নাই, ইকামা নাই। আজ দিবে কাল দিবে করে ইকামা করে দেয়নি। নিরূপায় হয়ে সেখান থেকে ছুটে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছি। বড় শহরে উঠছি না। সেখানে পুলিশের রেইড বেশি। এদিকে টুকটাক যা কাজ পাই, এভাবেই চলছে। এখানে কেউ গ্রেফতার না হয়ে পাঁচ-সাত বছরও থাকছেন। আবার কারও ভাগ্য খারাপ হলে ছয় মাস, এক বছরের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে দেশে ফিরছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অভিযোগ সেলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, অধিকাংশ অভিযোগ এজেন্সির বিরুদ্ধে। এক ভিসার কথা বলে অন্য ভিসায় কাজ দেয়, শ্রমিকরা কাজ করে টাকা পান না, ইকামা হয় না, পরে তারা অবৈধ হয়ে যায়। এদের পরিবার এসে বিএমইটিতে অভিযোগ দেয়। এসব অভিযোগই বেশি।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় বড় কোম্পানির কথা শুনে প্রতারণা শিকার হন কর্মীরা। অনেকে আত্মীয়স্বজনের কথামতো ফ্রি ভিসায় গিয়ে আর কাজ জোগাড় করতে পারেন না। এরপর যখন কাগজ থাকে না, দেশে চলে গেলে একেবারে চলে যেতে হবে এই ভয়ে অনেকে দেশে যান না। বিদেশে কাটিয়ে দেন বছরের পর বছর। কোনো মতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
অভিবাসী ও শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতারণার শিকার হয়ে যারা বিদেশ গেছেন, তাদের ১৮ শতাংশ অসময়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এদের কেউ কাজ না পেয়ে আসেন, কেউবা এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার হয়ে আসেন।
রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, দালাল কিংবা এজেন্সি এদের বিরুদ্ধে একবার ব্যবস্থা নিলে, এরা দ্বিতীয়বার সাহস করবে না। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। অন্যদিকে বিদেশে যারা দালাল ওদেরও ধরা যাচ্ছে না। আমাদের ১০ লাখ লোক পাঠানোর দরকার নেই। দুই লাখ লোক যাক, যারা গিয়ে যথাযথ কাজ এবং বেতন পাবে৷
সমাধান কীভাবে?
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ মুনীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘লোক পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়ায় গ্রাম থেকে প্রবাস পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনা দরকার। এখানে হাইকমিশনের মাধ্যমে দেখতে হবে, বিদেশে একটা মানুষ এলে আসলে কাজ পাবে কি না? সেখানে কি আসলে কাজ আছে? ওই কোম্পানি কি আসলেই লোক নিচ্ছে? ভালো স্যালারি দেবে? কমিটমেন্ট রাখবে কি না? এই মনিটরিংগুলো হচ্ছে না। হাইকমিশন সব সময় অজুহাত দেখায় তাদের লোকবল সংকট।’
আসিম মুনীর বলেন, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা দরকার। শ্রমিকরা গিয়ে প্রতারিত হলে জবাবদিহিতার সুযোগ থাকে। ফলোআপ করা যায়। বিদেশ থেকে যে কোম্পানি লোক নেবে তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি করবে। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রতিনিধিরা থাকবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো লোক পাঠাবে। তখন এজেন্সিগুলোর প্রতারণার সুযোগ থাকবে না। মানুষের প্রতারিত হওয়ার হার কমবে।
যা বলছে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘অ্যাটেস্টেশন করা ছাড়া কোনো কর্মী পাঠানোর সুযোগ নেই। এখন সরকার এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের দূতাবাস ওখানে সব দেখে শুনে জাস্টিফাই করবে। ওখানে কোম্পানির রিকোয়ারমেন্ট আছে কি না এসব চেক করে লোক যাবে। যারা যাচ্ছে এদের অনেকে আত্মীয়স্বজনের দেওয়া ভিসায় যায়। তাদের লেনদেন যা হয় গ্রামে, ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডসের মধ্যে হয়। পরে এজেন্সিকে দোষ দেয়।’
আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রি ভিসা, হাউজহোল্ড ওয়ার্কার ভিসার নামে একটা ফাঁদ আছে। ফ্রি ভিসা বলতে কোনো ভিসা নেই। এর নাম করে ভিসা বাণিজ্য হয়, সেখানে গিয়ে লোকজন কাজ পায় না, চলে আসে। এই ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশের তুলনায় সৌদি আরবে বেশি ঘটে। আমাদের অনেক বড় শ্রমবাজার এটি। এই বাজারটাকে সবাই মিলে গুরুত্ব দিতে হবে।’
‘যারা যাচ্ছে তারা কোথায় যাচ্ছে, কোন ভিসায় যাচ্ছে। এটা তাদের বুঝতে হবে। সরকার বারবার ওয়ার্নিং দিচ্ছে, সচেতন হয়ে যাচাই-বাছাই করে যেতে। কোন কাজের ওপর যাচ্ছে সেটাও জেনে যেতে হবে। এখন ইন্টারনেটের যুগ, খুব সহজেই এগুলা জানা যায়। শহরে এখন চাইলেই মানুষকে প্রলুব্ধ করা যায় না। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো নিরীহ রয়ে গেছে। কুচক্রী দালালরা তাদের সহজে বশ করে। দালালরা যা বলে তা বিশ্বাস করে।’
বায়রার মহাসচিব বলেন, ‘হিউম্যান ট্রেন্ড হলো বিদেশ যাওয়া। সবাই উন্নত জীবনের আশা করে। এই যাওয়াটাকে মিনিংফুল করতে হলে, যারা যাবে তাদেরই সবচেয়ে বেশি সচেতন এবং জেনে বুঝে যেতে হবে। এখন ওয়ার্নিংটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ভিজিট ভিসায় গিয়ে ওয়ার্ক ভিসায় কনভার্ট হবে, এগুলো ট্র্যাপ। অনেকে আবার জেনেই যাচ্ছে। কর্মীদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। এই ছাড়া আমি কোনো পথ দেখি না।’