Image description
♦ হচ্ছে না কর্মসংস্থান, রাজস্ব ঘাটতির চাপে ব্যাংকনির্ভরতা বাড়ছে সরকারের ♦ আট মাসে ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে প্রতিদিন। গত আট মাসে বেসরকারি খাতে কোনো ঋণ দেয়নি এমনও ব্যাংক রয়েছে। সমস্যায় নেই এমন ব্যাংকও বেসরকারি খাতে ঋণ দিচ্ছে না। শিল্প খাতে ঋণ কমে যাওয়া ছাড়াও এখনো এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। গত আট মাসে দেশে নতুন কোনো কর্মসংস্থান হয়নি। গত তিন মাসে দেশের প্রায় আড়াই শ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়েছে। অন্যান্য খাতেও এলসি খুলতে না পারা ও প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে কারখানা বন্ধ রেখেছেন অনেক মালিক।

জানা গেছে, প্রতি মাসেই বেসরকারি খাতে ঋণ বা বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে। কর্মসংস্থানে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক খাতে এখন বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত জানুয়ারিতে যেখানে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সর্বশেষ যা ৭ শতাংশের নিচে নেমেছে। যা সাম্প্রতিক সময়ের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম। ২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে ৭ শতাংশ নামলেও অন্যান্য সময় প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামায় ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমেছে। অনেক ব্যাংকের হাতে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮০ হাজার ১১০ কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাস শেষে যা ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা ছিল। বর্তমানের এ প্রবৃদ্ধি গড় সুদহারের অনেক কম। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার রয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যা ৮ শতাংশের নিচে ছিল। ২০২১ সালের মে মাসে একবার ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নেমেছিল।

করোনা-পরবর্তী সময়ে ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশে উঠেছিল। পরের অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয় ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের নভেম্বরের আগ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি সব সময় দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমেছিল। হঠাৎ করে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থছরের গত ১০ মার্চ পর্যন্ত নিট ৩৮ হাজার ৫১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। যা জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, শেষ এক মাস ১০ দিনে তা দ্বিগুণ হয়েছে। এই অস্থিরতার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা। ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুরে গত আট মাসে শতাধিক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়ে নিজেদের ছয়টি কারখানা বন্ধ করে কেয়া গ্রুপ। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। এতে কমছে কর্মসংস্থান বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, বেসরকারি খাতই দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির প্রধান অংশ। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে বেসরকারি খাতের দিকে নজর দিতে হবে। শিল্পের উৎপাদন, বিপণন কিংবা সেবা খাত সবই বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতির নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে ব্যবসায়ীরা আরও নাজুক পরিস্থিতিতে পড়বেন। জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবাই কিছুটা উদ্বিগ্ন। দেশের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে কোনো ব্যবসায়ীই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তবে তারল্যসংকট থাকলেও ব্যাংকগুলো এখনো ভালো প্রকল্প পেলে ঋণ দিচ্ছে। সবাই নিজেদের বিদ্যমান ব্যবসা সামলে রাখায় বেশি মনোযোগী। এ কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি এতটা কমে গেছে।