Image description

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অফ বাংলাদেশ’ প্রস্তাব করেছে ইসলামী আন্দোলন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন দলটির নেতারা। এছাড়াও দলটির চারটি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে- যেগুলো হল আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহিতা, শরীয়াহ আইন এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ সেখ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ টি প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৩০ টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টি দ্বিমত এবং ১১টিতে আংশিকভাবে একমত। এছাড়া দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে।

 

চারটি মৌলিক প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি না থাকলে মানুষ সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক হতে পারে। এ জন্য সকল পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি বা শুদ্ধাচারের কথা বলেছি।

 

চারটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে; বিবেকের কাছে, জনগণের কাছে; ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

 

বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে তা বন্ধে শরীয়াহ করার দাবি করার জন্য। তিনি বলেন, শরীয়াহ আইন সর্বজনীন, সবধর্মের বিষয়ে বিধান আছে। যা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে অত্যন্ত কার্যকর। বিএনপিও শরীয়াহ আইনে একমত করে আমাদের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছে। তারা শরীয়াহ বিরোধী আইন করবে না বলে আমাদের জানিয়েছে।

 

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক হারে চাই। স্থায়ীভাবে স্বৈরাচার প্রতিরোধীতা কার্যকর পদ্ধতি।

সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদেও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব ইসলামী আন্দেোলন করেছে বলে জানিয়েছেন আশরাফ আলী আকন।

 

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের সুপারিশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে একটা জনকল্যাণ রাষ্ট্র। জনকল্যাণ নামটা দেখলে মানুষের মনে যাতে অকল্যাণ কোন চিন্তা না আসে এ জন্য আমরা পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অফ বাংলাদেদেশের প্রস্তাব করেছি।

 

স্বাধীনতা পরে সকলের অংশগ্রহণে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে যাতে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। আমাদের সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে বলে আমরা মনেকরি না। কমিশনের পক্ষ থেকে মতামতগুলো পর্যালোচনা করব, কোথায় একমত নয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

 

আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করব। তারপরও দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা করব।

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সকল দলের যুক্ত থেকে একটা ঐকমত্যের জায়গায় যেতে চাই। পাশাপাশি নাগরিকদের মতামত নেব। সেই প্রক্রিয়াটা দ্রুতই করতে হবে আমাদের। কারণ, সময় স্বল্পতা আছে। আশাকরছি কমিশনের নির্ধারিত ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।

 

প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩২ টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে কমিশন।