Image description

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গৃহীত সবচেয়ে ব্যর্থ প্রকল্পগুলোর একটি বিমানবন্দর-গাজীপুর বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। দুর্বল পরিকল্পনা, অসম্পূর্ণ নকশা আর বিলম্বিত বাস্তবায়নে প্রকল্পটি পরিণত হয়েছে বোঝায়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গৃহীত সবচেয়ে ব্যর্থ প্রকল্পগুলোর একটি বিমানবন্দর-গাজীপুর বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। দুর্বল পরিকল্পনা, অসম্পূর্ণ নকশা আর বিলম্বিত বাস্তবায়নে প্রকল্পটি পরিণত হয়েছে বোঝায়। প্রকল্পের কাজ ৯৭ শতাংশের বেশি শেষ। অবকাঠামো গড়ে উঠলেও এখনো বিআরটি পরিষেবা চালুর উপযোগী হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে এ করিডোর কার্যকর করতে প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটি শেষ করতে নতুন করে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে আরো চার বছর। এখন পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেলে নির্মাণ ব্যয় ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ৫০টি বাসসহ বিআরটি করিডোর পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হবে। করিডোরটি যাত্রীবান্ধব ও নিরাপদ করতে যুক্ত হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। স্টেশন ও ডিপো ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি গত বছর ছাত্র আন্দোলনের সময় ঠিকাদারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা হবে।

সম্প্রতি বিআরটি করিডোর পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সদ্য যোগ দেয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন। অবশিষ্ট কাজ শেষ করে প্রকল্পটি কার্যকর করতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রকল্পের বেশকিছু ক্ষতি হয়েছে। এস্কেলেটর, লিফটসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য ঠিকাদারকে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন অনুষঙ্গে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কিছু নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হচ্ছে। আমি যতদূর জানি, প্রকল্পের দরপত্র হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন ঠিকাদার যে নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করে দিয়েছিল, বর্তমানের নির্মাণ ব্যয় কিন্তু তার চেয়েও বেশি হবে। এখন আমরা প্রকল্পে যা কিছু পরিবর্তন করতে চাই না কেন, তার জন্য আমাদের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। তারপরও কীভাবে সবচেয়ে কম খরচে প্রকল্পের বাকি কাজগুলো শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা আমাদের আছে।’

 

বিআরটিকে কার্যকর করতে হলে সবার আগে প্রকল্পটি শেষ করা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি কার্যকর করা আমাদের মূল লক্ষ্য। ছাত্র আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি শেষ করতে আমাদের একটু সময় লাগবে। কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা প্রকল্পের স্থগিত থাকা কাজগুলো বাস্তবায়ন শুরু করে দেব। এ কাজগুলো শেষ করে অপারেশনে নিয়ে যেতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।’

 

মাঠ পর্যায়ে বিআরটি প্রকল্পের (গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট; বিআরটি বিমানবন্দর-গাজীপুর) কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা খরচ করে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিআরটি লেন ও ২৫টি স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ভৌত কাজ শুরুর আট বছর পার হলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি।

গতকাল সরজমিনে বিআরটি করিডোর পরিদর্শন করে দেখা গেছে, স্টেশন ভবনের কাঠামো প্রস্তুত হলেও সেগুলো এখনো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। বিআরটি লেনে প্রতিবন্ধক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত নির্মাণকাজের অগগতি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

প্রকল্পের কাজ যখন শেষের পথে, তখন আনা হচ্ছে বড় ধরনের সংশোধনী। শেষ পর্যায়ে এসে প্রকল্পটিতে কেন এ সংশোধনী আনা হচ্ছে এমন প্রশ্নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহছানুল হক বলেন, ‘বিআরটি কার্যকর করার জন্য এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এখানে একটা বড় অংকের বিনিয়োগ হয়েছে। বাস্তবায়নকালে মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমরা সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেন প্রকল্পের সুফল মানুষ পেতে পারে।’

ঢাকায় বিআরটি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য গঠিত ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট পিএলসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবশিষ্ট ২ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হলেও করিডোরটি চালুর উপযোগী হবে না। এ প্রকল্পে বেশকিছু ঘাটতি রয়ে গেছে। করিডোরে বাস পরিচালনার জন্য কোনো যন্ত্রপাতি কোম্পানির নেই। বিআরটি স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথগুলো চূড়ান্ত হয়নি। ডিপোর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার ঘাটতি রয়েছে। পুরো করিডোরের নিরাপত্তার জন্যও কোনো ধরনের প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। এমন আরো অনেক অনুষঙ্গ রয়েছে, যেগুলো বিআরটি করিডোর পরিচালনার জন্য প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গগুলো যুক্ত করতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) একটি সংশোধনী এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এতে নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এক বছরের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর অর্থাৎ ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা বিআরটি কোম্পানির এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, প্রকল্পটির ডিপিপি যেভাবে প্রস্তুত করা আছে, তাতে কেবল পূর্ত কাজই প্রাধান্য পেয়েছে। পূর্ত কাজ শেষ হওয়ার পর অপারেশন নিয়ে তেমন কোনো অনুষঙ্গ ডিপিপিতে রাখা হয়নি। এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দও নেই। অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ যুক্ত করতেই প্রকল্প পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিআরটি প্রকল্পের অসম্পূর্ণ কাজগুলো দ্রুত শেষ করে করিডোরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকরভাবে চালুর জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেয়া বিশেষ সহকারীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌প্রকল্পটিতে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। এগুলো সমাধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’