
রোজার বাবা আল আমিন রনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার মহাখালীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
জীবনের কোনো কিছুর সঙ্গেই বাবার স্পর্শ নেই রোজার। কারণ, সে পৃথিবীতে আসার আগেই বাবা পরলোকে চলে গেছেন। তাই জীবনের প্রথম ঈদই বাবা ছাড়া কাটিয়েছে রোজা। শুধু ঈদ কেন, কোনো আনন্দই আর করা হবে না বাবার সঙ্গে।
রোজার বাবা আল আমিন রনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকালে মহাখালী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার পূর্ব বেতাল গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হাওলাদারের ছেলে।
ওই সময় স্ত্রী মীম আক্তারের গর্ভে ছিল রোজা। পরে ৪ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মীম আক্তার।
বরিশালের বানারীপাড়ার পশ্চিম চাখার মীরের বাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন মাঝির মেয়ে মীম। ২০ বছরের মীম তার সন্তান রোজাকে নিয়ে এখন সেখানেই আছেন। মীম আশা করেন, তিনি কারও দয়ায় বাঁচতে চান না। তিনি চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকায় নিহত আল আমিন রনি।
মীম বলেন, তার স্বামী রনি মহাখালীতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। পাশাপাশি পার্টটাইম খাবার সরবরাহের কাজও করতেন। স্ত্রী, বিধবা মা ও ভাই-বোন নিয়ে মহাখালী সাততলা বাউন্ডারি বস্তিতে থাকতেন।
স্বামী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার আর কোনো খোঁজ-খবর রাখেনি। ঈদ উপলক্ষে শাশুড়ি ও দেবর এসেছিল রোজার একটি জামা নিয়ে। আর কিছু না। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হয়েছে। ঈদে রোজার জন্য তার নানাও জামা কিনে দিয়েছে।
মীম বলেন, “বাবার একার পক্ষে তো সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই মানুষের সহায়তার চেয়ে স্থায়ী চাকরি জরুরি।”
এইচএসসি পাস মীম স্নাতকে ভর্তির চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া তিনি চাখার বাজারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকে ঘরে একা রেখে যাওয়া যায় না। তাই প্রতিদিন সন্তান ও মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। তিনি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন; মা কন্যাকে নিয়ে সেন্টারে থাকেন।
মীম বলেন, “জীবনে কোনোদিন ঈদের আনন্দ বাবার সঙ্গে উপভোগ করতে পারবে না রোজা। এ কষ্ট কাউকে বোঝানো সম্ভব না।”