
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মোঃ মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছিলো। মানবাধিকার সংস্থা Alliance for Witness Transparency (AWT) এর কাছে দেওয়া তার এই সাক্ষাৎকার গতকাল তাদের ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।
ওই রায়ের ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মধ্যে ২ ও ৩ নম্বর অভিযোগের রায় দেওয়া হয়েছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর রাজানাথপুর হাজীপাড়ার বাসিন্দা মোঃ মকবুল হোসেনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে।
ট্রাইব্যুনালের সাক্ষ্যে এটিএম আজহারের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে মকবুল বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই এপ্রিল এটিএম আজহারুল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীসহ টেক্সারহাটের ৬ নং রেলগেটে একটি ট্রেনের মাধ্যমে আসেন। এরপর টেক্সারহাটের বিভিন্ন বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন ও গুলি চালান।
এছাড়াও তমিজ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা ও ধাপপাড়া, মৃধা পাড়া, থনথুনি পাড়া এবং মোল্লা পাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া ও প্রায় ১৪/১৫ জনকে গুলি করে হত্যা করেন বলেও সাক্ষ্য দেন তিনি।
মকবুলের এই সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে ২ নম্বর ও ৩ নম্বর অভিযোগে এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল হয়।
AWT এর প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তিনি ও তার মা দৌড়াতে থাকলে তার মা গুলিতে নিহত হন। ওই সময় তিনি পালাতে সক্ষম হন। তিনি পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে এটিএম আজহারকে দেখেননি বলে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাননি। এজন্য তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে পালিয়ে যান।
মকবুল হোসেন আরও জানান, সরকারি বাহিনী মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করতে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে রংপুর সার্কিট হাউজে আটকে রেখে মিথ্যা সাক্ষ্য শেখায়। এরপর ঢাকায় একটা সেফ হোমে আটকে রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার বার চেষ্টা করেও এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে হত্যার হুমকির মুখে পঞ্চম বারে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াতে সক্ষম হয়। আর এ জবরদস্তিমূলক সাক্ষ্যেই এটিএম আজহারের ফাঁসির রায় হয়।
বাধ্য হয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে হলেও এটিএম আজহারের জন্য তার খারাপ লাগে বলেও জানিয়েছেন মকবুল। এটিএম আজহারের মুক্তি দাবী করে তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থণা করার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন ট্রাইবুনালে এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হওয়া মোঃ মকবুল হোসেন।
https://www.facebook.com/watch/?extid=MSG-UNK-UNK-UNK-IOS_GK0T-GK1C&mibextid=wwXIfr&v=1809968849734521