Image description
 

পশ্চিমবঙ্গ সরকার জমি দিচ্ছে না বলে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তৈরির কাজ শেষ হচ্ছে না বলে লোকসভায় অভিযোগ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার অভিযোগ, ‘রাজ্যে দুই হাজার দুইশ কিলোমিটারের সীমান্ত এলাকার মধ্যে ৪৫০ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেড়া তৈরির জন্য জমি দিচ্ছে না।’

বৃহস্পতিবার সংসদে অভিবাসন ও বিদেশি বিল ২০২৫ পাস হয়েছে। সেই বিল নিয়ে তিন ঘণ্টার বিতর্কের পর তার জবাব দিতে ওঠেন অমিত শাহ। তখন তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার জমি দিচ্ছে না বলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৪৫০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়া যাচ্ছে না।'

অমিত শাহর অভিযোগ, ‘যখনই বেড়া দেয়ার কাজ শুরু হয়, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাণ্ডব করে, ধর্মীয় স্লোগান দেয়। এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রাজ্য সরকার ক্ষমা করে দেয় বলে কাজ শেষ হচ্ছে না।'
 

তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ১১টা চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাত বার রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারপরেও বেড়া তৈরির কাজ হয়নি।’

অমিত শাহর দাবি, ‘একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ থেকেই অবৈধ অনুপ্রবেশ হচ্ছে। রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশকারীদের আধার কার্ড দিচ্ছে। তারপর তারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ভুয়া আধার কার্ড দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পাওয়া যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিন্তা করবেন না। পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী সরকার বিজেপি-ই গঠন করবে। তখন বাকি এলাকাগুলোয় কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শেষ হবে।’

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফের অধিকারক্ষেত্র ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করেছে। কিন্তু গুজরাটে তা ৮০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। কৌতুহলকর অগ্রাধিকার। আর এখন বিএসএফ সীমান্ত রক্ষা করার কাজে ব্যর্থ, অমিত শাহ তার দায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপরে চাপিয়ে দিলেন। নিজের অব্যবস্থা ঠিক করার চেয়ে তিনি দায়ভার অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন।’

লোকসভায় বিল পাস

তিন ঘণ্টা ধরে বিতর্কের পর লোকসভায় অভিবাসন ও বিদেশি বিল ২০২৫ পাস হয়। এই বিলে অভিবাসন ও বিদেশি সংক্রান্ত আইনকে আরো কড়া করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিতর্কের জবাবে বলেছেন, ‘যারা ভারতে পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাণিজ্যের জন্য আসবেন, তাদের স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু যারা ভারতের বিপদের কারণ হবে, তারা রোহিঙ্গা হোক বা বাংলাদেশি, তাদের কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে।’

কী বলেছেন অমিত শাহ?

অমিত শাহ বলেছেন, ‘যারা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে আসবে, তাদের যাতে চিহ্নিত করা যায়, এই বিলে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা যাবে। অথবা যারা ভিসার সময়ের বাইরে গিয়ে ভারতে থাকছে, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।''

তিনি বলেন, ‘যে বিদেশিরা ভালো কাজের জন্য আসবেন, দেশের উন্নয়নে সাহায্য করবেন, তাদের স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু যারা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসবে, তাদেরই শুধু থামানো হবে। ভারত কোনো ধর্মশালা নয়। যে সব রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে, তারা ভারতের নিরাপত্তা লংঘন করছে. তারা ভারতে কোনো অশান্তি করলে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিলে কী পরিবর্তন করা হয়েছে?

১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইন, ১৯৩৯ সালের রেজিস্ট্রেশন অফ ফরেনার্স আইন, ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স আইন এবং ২০০০ সালের দ্য ইমিগ্রেশন(ক্যারিয়ারস লায়বেলিটি) আইনের স্থলাভিষিক্ত হবে এই নতুন আইন।

এই আইনে বলা হয়েছে, ভারতে ঢোকার জন্য বা বসবাসের জন্য যদি কেউ ভুয়া পাসপোর্ট বা ভিসার আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের সাত বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকার জরিমানা বা দুটোই হবে। তাছাড়া ভারতে যদি কেউ বৈধ পাসপোর্ট ছাড়া ঢোকে তাহলে তাদের পাঁচ বছরের জেল, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা দুটোই হবে।

সব হোটেল, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমকে বিদেশিদের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে, যাতে তারা ভিসার সময়সীমার বাইরে গিয়ে ভারতে থেকে না যায়, তার উপর নজরদারি রাখা যায়। সব বিমান ও জাহাজসংস্থাকে বিদেশিদের তালিকা আগে থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে