
নতুন গ্যাঁড়াকলে পড়ছেন মেটা ব্যবহারকারীরা। ফেসবুকে ভুয়া খবর ও বিজ্ঞাপনের শিকার হচ্ছেন। এ জন্য তৈরি করা হয়েছে দেশ-বিদেশের পরিচিত ৩৯টি গণমাধ্যমের নকল ওয়েবসাইট।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিস ল্যাব বলছে, কমপক্ষে ৩৬টি দেশের প্রতারকরা এক হয়ে করছে প্রতারণা। হাতিয়ে নিচ্ছে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা টাকা।
বিভ্রান্তির শুরু কয়েক মাস আগে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের এই ছবি দিয়ে। দেশের পরিচিত একটি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিরুদ্ধে অনলাইন বিনিয়োগ স্কিম প্রচারের অভিযোগে মামলা করেছে। সে জন্য তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু পুরো বিষয়টাই ছিল ভুয়া।
এমন প্রতারণামূলক নিউজের যেন সমুদ্রে ভাসছে বাংলাদেশ। এ জন্য ব্যবহার হচ্ছে মূলত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। যার লিংকে ক্লিক করলেই চলে যায় খবরের নকল ওয়েবসাইটে। সেখানে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি ভুয়া প্রতিবেদনের ছড়াছড়ি।
স্প্যাম বিজ্ঞাপন কিংবা ফেক নিউজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিস। সাম্প্রতিক ঘটনা যাচাইয়ে তারা বিশ্লেষণ করেছে, ৩৭টি সংবাদ ও ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন এবং ১৫টি অনলাইন রিভিউ।
বাংলাদেশে এই ধরনের ভুয়া সংবাদ সবচেয়ে বেশি তৈরি হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সদ্য বিদায়ী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ খান ও অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান নিয়ে। চক্রটির কার্যক্রম চোখে পড়েছে ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নাইজেরিয়া, ঘানা, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, চিলি, কাতারসহ অন্তত ৩৬টি দেশে।
অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান বললেন, এ রকম অনেক লিঙ্ক ও স্ক্যাম বের হয়েছে, যারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। এইসব স্ক্যামের প্রতারকদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বললেন তিনি।
এর পেছনে কারা আছে, এটা কেন করছে, তাদের উদ্দেশ্য কী, এটা আসলে এখন সামনে আসাটা খুবই জরুরি বলে মনে করেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বললেন তিনি।
শুধু ভুয়া সংবাদ ও বিজ্ঞাপন তৈরি করেই ক্ষান্ত হয়নি এসব প্রতারক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেইড বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে এসব ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হয়। ব্যবহারকারীরা যখন লিঙ্কে ক্লিক করেন, তখন অনেক সময় তাদের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অর্থলগ্নির লোভও দেখানো হয়।
সেখানে কেউ একবার লগইন করলেই ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য চলে যায় স্ক্যামারদের হাতে। অনলাইন বিনিয়োগ নিয়ে অতি আগ্রহ থাকায় সহজেই এসব প্রতারণার ফাঁদে ধরা দিচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন ও আফ্রিকার কিছু দেশের মানুষ।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গেমের প্রতি আমাদের ছেলেমেয়েদের আসক্তি আছে, এটি ব্যবহার করেই এক ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে। সেই প্রতারণার মাধ্যমে তাদের বাবা-মায়ের ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার নিয়ে নেয়া এবং তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। আমেরিকাতে দেখা গেছে, অনেকগুলো বাচ্চা আত্মহত্যা করেছে গত কয়েক বছরে। যাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে ফিলিপাইন থেকে।
যেসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট কিংবা পেজ ব্যবহার করে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে, ইতোমধ্যে তেমন কয়েক লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে মেটা।