
ঘটনাটি গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরের। ওইদিন রাতে ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে ঘুরতে গিয়ে প্রাইভেট কার চাপায় প্রাণ হারান বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ। এই ঘটনায় আহত হন তার দুই বন্ধু বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান।
ঘটনার সময় মদ্যপ অবস্থায় প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে মুবিন আল মামুন। সেসময় ঘটনাস্থল থেকে মামুনের পাশাপাশি তার বন্ধু মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন মুবিন ও মিরাজুলের ডোপ টেস্টে ফল ‘পজিটিভ’ আসে। বর্তমানে তারা তিনজনই কারাগারে আছেন।
সম্প্রতি এই ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। তবে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা জামিনের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। এরপরেই রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের প্রেক্ষিতে সোমবার চেম্বার জজ আদালত ওই আসামিদের জামিন স্থগিত করেছেন।
এদিকে আলোচিত এই ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেছে।
ঘটনার সময় হওয়া দুই মামলার মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হওয়া মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশ। তবে নিহতের বাবার করা মামলায় মেডিকেল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভেহিক্যাল রিপোর্ট (যানবাহনের রিপোর্ট) পায়নি পুলিশ। এই কারণে মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম থেমে রয়েছে।
পুলিশ বলছে, রোজার ঈদের ছুটির পরপরই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে রিপোর্ট চেয়ে তাগিদ দেওয়া হবে। এরপর দ্রুতই মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।
ভুক্তভোগীর পরিবার বলছে, মাদকের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত আদালতে পাঠানো গেলে আসামিরা জামিনের সুযোগ পেত না।
মামলার তদন্তের কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, “মেডিকেল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভেহিক্যাল রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি। যার কারণে ওই ঘটনাটির অনেক কিছু পরিস্কার থাকলেও এখনও তদন্ত সম্পন্ন করা যায়নি। ঈদের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিবেদনের বিষয়ে যোগাযোগ করব।”
তিনি জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি হয়েছিল, সেটির তদন্ত শেষ হয়েছে। আমরা ঈদের পরপরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মাসুদ মিয়া বলেন, “এটা একটা সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড। সেদিন রাতে আসামিরা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা মুহতাসিম মাসুদসহ তিন জনকে ইচ্ছাকৃতভাবে মদ্যপ অবস্থায় লাইসেন্সবিহীন গাড়িতে গেম খেলার মতো, বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তখন গাড়ির গতি ১০০ কিলোমিটার বা এর ঊর্ধ্বে ছিল। এটা কোনো রোড এক্সিডেন্ট নয়, এটা ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড।”
এসময় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ধীরগতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “তদন্ত শেষ করতে ধীরগতি আসামিদের উপকার করছে। ধীরগতির সুযোগ নিয়েই আসামিরা সাধারণত আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে যায়; আমাদের মামলায়ও তা হয়েছিল। কিন্তু বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জামিন নিয়ে বের হতে পারেন নাই বলে আমি মনে করি।”
তিনি বলেন, “বেশকিছু দিন ধরে শুধু শুনছি মাদক মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দ্রুত মামলার চার্জশিট দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আর এই নির্মম হত্যার বিচার মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন নিষ্ঠুর অপরাধ আর না ঘটে।”
উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বুয়েটের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ তার দুই সহপাঠীকে নিয়ে ৩০০ ফুট সড়কে মোটরসাইকেলে ঘুরতে যান। পুলিশের চেকপোস্টে থেকে তাদের সিগন্যাল দিলে তারা গাড়ি থামায়। এসময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি প্রাইভেটকার চেকপোস্টের ব্যারিকেড ভেঙে তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মুনতাসিম মাসুদের। গুরুতর আহত হন তার দুই সহপাঠী বন্ধু অমিত সাহা এবং মেহেদি হাসান খান।
পরে পুলিশ প্রাইভেটকার চালক মুবিন আল মামুন, তার দুই বন্ধু মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে বিদেশি মদের বোতলসহ গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মাসুদ মিয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে মদ্যপ অবস্থায় ছিল কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ডোপ টেস্ট করতে ২০ ডিসেম্বর দুপুরে তাদের তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডোপ টেস্টে প্রাইভেটকার চালক মুবিন আল মামুন ও মিরাজুল করিমের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তবে আসিফ চৌধুরীর রিপোর্ট নেগেটিভ।
পরে ২১ ডিসেম্বর বিকালে রূপগঞ্জ থানার এএসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে মাদক সেবন ও বহনের অপরাধে মুবিন আল মামুন ও মিরাজুলকে এবং মাদকদ্রব্য সরবরাহে সহায়তার অভিযোগে আসিফ চৌধুরীকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।
(ঢাকাটাইমস