
নিজ এলাকা পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে যাওয়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। এবার সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন সারজিস আলম।
মঙ্গলবার রাতে এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন সারজিস আলম।
পোস্টে তিনি লেখেন, একজন নতুন করে রাজনীতিতে এসেছে মানেই তার পরিবার সহায়-সম্বলহীন, অসহায় বা নিঃস্ব নয়। এ ধরণের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা সবার আগে বাদ দিতে হবে। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতারা চাঁদাবাজি, লুটপাট করে এসব কাজ করেছে বলে, একই কাজ করে অন্যরাও সেটা করবে বিষয়টি তেমনও নয়। আমার এই মুহূর্তে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই মানে এই নয় যে আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনেরও সেই সামর্থ্য নেই।
তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশের একটি জেলার রাজনৈতিক কালচারের সঙ্গে অন্য একটি জেলার রাজনৈতিক কালচারেরও পুরোপুরি মিল নেই। তাই আমার আসনে যা দেখছি সেটা দিয়ে অন্য আসনেও তুলনা করা যায় না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলগত অবস্থান বিবেচনায় সেই ইকুয়েশনগুলো ভিন্ন হয়। আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই। কিন্তু নতুন বন্দোবস্ত বলতে আমরা যেটা কল্পনা করি সেটা ছয় মাসের মধ্যে এপ্লাই করলে অলমোস্ট ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জামানত হারানোর সম্ভাবনা থাকবে। তার মানে কি আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই না? অবশ্যই চাই।
পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, কিন্তু সেটা কখনো ছয় মাসের ব্যবধানে ১৮০ ডিগ্রি উল্টে যাবে না বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এভাবে পরিবর্তিত হবে। এক সময় হয়তো শতভাগ নতুন বন্দোবস্ত দেখতে পাবো।
ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয় উল্লেখ করে তিনি লেখেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করার জনবল এবং সামর্থ্য না থাকলে মাঠের রাজনীতিতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। অন্য নেতা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণও আপনাকে গোনায় ধরবে না। কারণ মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতামুখী। আমাদের যেমন নতুন বন্দোবস্তের দিকে যেতে হবে, তেমনি মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য পূর্বের যেই বন্দোবস্তগুলো এখনই ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সেগুলোকে পাশে রেখে আপাতত চলতে হবে। সেগুলো ছুঁড়ে ফেলার সুযোগ আসলে তা করা হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক বুদ্ধিজীবী তাদের কিছু আইডিয়াগুলোকে বিভিন্ন ন্যারেটিভ দিয়ে স্টাবলিশ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দেখাচ্ছে। দেশের এই মানসিকতার জনগণের কাছে সেই প্রসেসে ইলেকশনে নামলে জামানত হারাবে। এমনকি একই প্রসেসে ৫ বছর পরে ইলেকশন করলেও জামানত হারাবে। তারা শুধু পেছনে লাগতে পারে। কিন্তু কোন প্রসেসে আপনি মাঠে ইলেকশন করে জিতে আসতে পারবেন সেগুলো দেখাতে পারেনা। এছাড়া, দেখালেও অনেকক্ষেত্রে সেগুলোর মাঠের বাস্তবতা নেই।
চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা অনেকেই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মামলা বাণিজ্য, হয়রানি এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললাম। কিন্তু এই অভ্যুত্থানেরই একটি অংশ আবার ওই একই কাজগুলো করছে। আটকাতে পেরেছেন কি? পারেননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আপনারা অনেকে কথাও বলতে পারছি না। আর বললেও তারা সে কথাকে কানে নেয় না। শুধু নতুন করে চিন্তা করা মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছি। যারা এখনও সেই কথা বলার স্পেসটা দেয় এবং কথাগুলোকে রিসিভ করে।
তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচার পরিবর্তন করতে হবে। এটা আবশ্যক। কিন্তু যতদিন না আমজনতা তাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করছে, ততদিন সরাসরি নতুন চিন্তাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে গেলে সময়ের সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন। আপনি আজকে একটি আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিন। তাহলে কাল থেকে সেই আসনের অসংখ্য মানুষ নানা তদবির নিয়ে আসবে। এর মধ্যে অনেক অনৈতিক চাওয়া থাকবে। আবার যাদের আবদার পূরণ করতে পারবেন না তারা বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করবে। অথচ তারা একটিবারও ভাববে না সেই সামর্থ্য আছে কিনা অথবা বিষয়গুলো ন্যায় সঙ্গত কিনা। তারা শুধু নিজের স্বার্থটা ভাববে। আপনি দিলে আছে, না দিলে নাই।
এনসিপির এই নেতা লেখেন, এখন আপনার কোনো অথরিটিও নাই। এক্ষেত্রে সরাসরি নতুন বন্দোবস্ত প্রয়োগ করে দীর্ঘ মেয়াদে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার চেয়ে সাময়িকভাবে নতুন-পুরনো মিশেলে এগিয়ে গিয়ে নির্বাচিত হতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে নতুন বন্দোবস্তের কালচার চালু ও তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার সুযোগ বেশি থাকবে। আমি এটাকে মন্দের ভালো মনে করি।
সবশেষ তিনি লেখেন, আমার এলাকায় ফেরার সময় এত গাড়ি, এত মানুষ; তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করবে, তা আমিও কল্পনা করিনি। আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং জেলার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্ধেকের বেশি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। যেগুলোর ব্যয় আমাদের বহন করতে হয়নি। বাকি প্রায় ৫০ টার মতো গাড়ির ৬০০০ করে যে তিন লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আরও ৫০ বছর আগেও আমার পরিবারের ছিল। শুধু আমার দাদা যতটুকু রেখে গিয়েছেন, সেটা দিয়ে আমার ইলেকশনও করে ফেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।