
সাত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থেকেও রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ চলেছে ‘খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে’। সুবিধার চেয়ে অসুবিধার কথা আর নানা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বার বার হয়েছে সংবাদ শিরোনাম। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই অধিভুক্তি থেকে মুক্তি মিলেছে, শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে নতুন পরিচয়।
রাজধানীর সরকারি এই সাত কলেজ নিয়ে গঠন করা হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়; নাম ঠিক হয়েছে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’।
কেবল সরকারি তিতুমীর কলেজ বাদে বাকি ছয়টি কলেজের শিক্ষার্থীরা এই নামে খুশি। তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা আলাদা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত আর নামের বিষয়টি সুরাহা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠন কিংবা রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে নানা কথা বলছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যে প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছিলেন, সেই ‘কলেজিয়েট পদ্ধতি’ তারা চান না। অনুষদভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ‘যুগোপযোগী’ বিশ্ববিদ্যালয় চান তারা।
প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর সাত কলেজের স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কেমন হবে সে রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি কাজ করছে। আগামী এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা বলছেন কমিটি সংশ্লিষ্টরা।
সাত কলেজকে স্বতন্ত্র কাঠামো দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশ অনুসারে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বের হতে বিভিন্ন সময়ে সড়কে আন্দোলন করেছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।
সুপারিশ অনুসারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাময়িক একটি কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে।
ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সাত কলেজের নজরদারি সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এর পরিচালক হবেন সাত কলেজের মধ্য থেকে নজরদারি সংস্থা মনোনীত একজন ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ’ অধ্যক্ষ।
প্রস্তাবিত কাঠামোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকনির্দেশনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তা সাত কলেজের শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়তা করবেন। একইভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে ওই কাঠামোকে সহায়তা করবেন। অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজে সহায়তা দেবেন। সাত কলেজে অনলাইনে ভর্তির জন্য একটি কমিটি থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বের হতে বিভিন্ন সময়ে সড়ক আটকে আন্দোলন চালিয়েছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকেই দ্রুত এ অন্তবর্তীকালীন কাঠামো গঠন করার দাবি জানিয়েছেন। কলেজগুলো হল- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
‘যুগোপযোগী’ বিশ্ববিদ্যালয় চান ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা
সাত কলেজে নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, সেটিকে যুগোপযোগী করার কথা বলছেন ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা।
কলেজটির শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের যে পুরনো যে বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে কলেজিয়েট পদ্ধতিতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হোক সেটা চাচ্ছি না। আগের বিষয়গুলোসহ যুগোপযোগী নতুন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক, সেটাই আমরা চাই।”
তিনি বলেন, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামটি রাজপথ থেকে উঠে এসেছে, তাই এ নামে তারা খুশি।
“যখন আমাদের আন্দোলন চলছিল, তখনও এই নামটি এসেছে। নাম নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন, তবে সবার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় যে নামটি এসেছে, সেটিই চূড়ান্ত প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত এসেছে। শুধু ঢাকা কলেজ নয়, সাত কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এ নিয়ে খুশি।”
দ্রুত কাঠামো চান ইডেনের ছাত্রীরা
সাত কলেজের বিষয়ে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন কাঠামো গঠনের দাবি জানাচ্ছেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সেই কাঠামো চূড়ান্ত করার পক্ষে কথা বলছেন তারা।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলনে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি স্মৃতি আক্তার বলেন, “সাত কলেজ আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে যাওয়ায় আমরা খুশি। ইউজিসি সবগুলো কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেই অন্তর্বর্তী কাঠামোর প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে একইভাবে সব কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত কাঠামো করবেন বলে আশা করি। সবার মতামত নিয়ে কাঠামো চূড়ান্ত হোক সেটাই চাই আমরা।”

স্নাতক চতুর্থ বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলেন, “সেশন জট ঠেকাতে আমাদের অন্তর্বর্তী কাঠামোটা দ্রুত হওয়া দরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ কাঠামো গঠন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছে। আমরা আশা করব সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দ্রুত অন্তর্বর্তী কাঠামোটা গঠন করা হবে। আমরা কলেজিয়েট পদ্ধতিতে নয়, পূর্ণাঙ্গ অনুষদভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো চাচ্ছি।”
নামে খুশি বদরুন্নেসার ছাত্রীরাও
সাত কলেজ নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, তার নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করার প্রস্তাবে খুশি বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলনে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অনজুমা ইসরাত ইমু লেন, “ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আমাদের স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে, এতে আমাদের কলেজের সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী খুশি।
“আসলে এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো বা কীভাবে চলবে সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। সেটি কী হয় তা দেখার বিষয়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে একটি মডেল প্রস্তাব করেছি ইউজিসিতে। অন্যান্য কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাও তাদের মত মডেল প্রস্তাব করেছেন। এখন ইউজিসির বা কমিটি কোনটি নিয়েছে তা রূপরেখা চূড়ান্ত হলে বোঝা যাবে।”
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত মডেল তুলে ধরে ইমু বলেন, “আমাদের প্রস্তাবনা ছিল, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কাঠামোতে আমাদের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চলবে। আর আমরা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কাঠামোতে অনার্স-মাস্টার্স পড়ব। এক্ষেত্রে আমাদের কলেজে ছেলেরাও পড়ার সুযোগ পাবেন। এমন প্রস্তাবনাই আমরা তুলে ধরেছি।”

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের এ ছাত্রী বলেন, “আসলে আমরা তো বের হয়ে যাব। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সুফল আমরা পাব না। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা প্রস্তাবনা তৈরি করে কমিটির কাছে জমা দিয়েছি।”
‘নতুন পরিচয়ে’ খুশি কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা
অধিভুক্তি থেকে বের হয়ে নতুন পরিচয় হচ্ছে, তাতে খুশি কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কলেজটির ছাত্র প্রতিনিধি জাকারিয়া বারী সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৬ সালে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হলাম তখন সবাই আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু আশা পূরণ হয়নি। আমরা পেয়েছি বঞ্চনা। তবে এখন আমাদের একটা নিজস্ব পরিচয় হতে যাচ্ছে, এ নিয়ে শুধু আমাদের কলেজ নয়, আমি মনে করি সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরাই খুশি।”
কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চান, এ প্রশ্নে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাগর বলেন, “ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সবগুলো কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই মতামত নিয়েছে। সেখানে আমরাসহ বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কলেজগুলোকে বিভিন্ন অনুষদে ভাগ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলানোর পক্ষে মতামত তুলে ধরেছেন। এখন কমিটি শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন।”
‘অনুষদভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ’ বিশ্ববিদ্যালয় চান সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীরা
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ওয়ালিদ জিসান বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রের সব অংশীজনদের যখন স্মারকলিপি দিয়েছি, তখন আমরা সুস্পষ্টভাবে সাত কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ অনুষদভিত্তিক স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের প্রস্তাব করি। সরকার আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়ার পরই আমরা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। এই সরকার যেহেতু ছাত্র-জনতার হাতে গঠিত, তাই এই সরকারের প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করবে।
“কেননা, অনুষদভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ফলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা নিরসন হবে, একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত সব সুযোগ নিশ্চিতের মাধ্যমে শিক্ষা সিন্ডিকেট নিপাত যাবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন আন্দোলন করেছি, তখন স্লোগানে মুখরিত করছিলাম ‘ঢাবি নাকি ঢাকেবি, ঢাকেবি ঢাকেবি’। প্রতিটি ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি অঙ্কন থেকে শুরু করে সব জায়গায় প্রচার করেছিলাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের’।
“স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠান ঢাবির সিন্ডিকেট প্রশাসনের হাত থেকে মুক্ত হওয়ায় আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল শুরু থেকে, ঢাকেবি নামকরণের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা দূর হয়েছে। তাই এই নামটি আমি এবং আমার ক্যাম্পাসের সব সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাদরে গ্রহণ করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামীতে এই নামটি আমাদের দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত হবে, দাসত্ব দূর হবে।”
‘কিছুটা আপত্তি’ বাঙলা কলেজ শিক্ষার্থীদের
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নাম নিয়ে আপত্তি তুলেছেন সরকারি বাঙলা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী। এই নামের কারণে ‘ঢাকা কলেজের প্রভাব থাকবে’ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আন্দোলনে সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম যখন শিক্ষার্থীদের থেকে চাওয়া হল, আমরা এমন একটি নাম চেয়েছিলাম যা হবে বিতর্কহীন। ঢাকা কলেজের আদি নাম ছিল ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’, এটি সবাই জানে। ফলে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নাম নিয়ে বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
“যেহেতু শুরু থেকেই সব আন্দোলনে এই নামটি ব্যবহার হয়ে আসছিল, তাই কিছু শিক্ষার্থীর বিরোধ থাকলেও সবাই এই নামটি মেনে নিয়েছে। আমাদের চাওয়া অতিদ্রুত নামটি গেজেট হোক।”

দ্রুত অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের ইউজিসি থেকে বলা হয়েছে, শিগগিরই অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হবে। যতদিন না বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাজেট হয় ততদিন ঢাবির সঙ্গে অন্তর্বর্তী প্রশাসন সমন্বয় করে এই কলেজগুলো পরিচালনা করবে। এই অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে নজরদারি করবে ইউজিসি। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন করা হোক। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়ে গেছে, সকলে যেহেতু ভাবছে নাম নিয়ে ঢাকা কলেজ আধিপত্য খাটাতে পারে, তাই বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান ঢাকা কলেজ ছাড়া অন্য কোনো কলেজ থেকে হোক। তাহলে হয়ত এই বিতর্কের অবসান ঘটবে।”
কী চান তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল সরকারি তিতুমীর কলেজও। সেখান থেকে বেরিয়ে সাতটি কলেজ নিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে, সেসময় তিতুমীর শিক্ষার্থীরা ওই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা তিতুমীর কলেজকেই আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবি জানাচ্ছেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সড়ক ও রেলপথ আটকে আন্দোলন করেন মহাখালীতে অবস্থিত কলেজটির শিক্ষার্থীরা। তারা অনশনও করেন। আন্দোলনের মধ্যে সচিবালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনায়ও বসেন।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর দপ্তর সম্পাদক মো. বেল্লাল হাসান বলেন, “আমরা সাতটি কলেজকে এক করে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করছি। তিতুমীর কলেজকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আমরা অবিচল।
“তিতুমীর কলেজের ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে চারজন শিক্ষার্থীকে রোববার ইউজিসির সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমাদের তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি সভা প্রত্যাখ্যান করে তাতে অনুপস্থিত ছিলেন। একজন ওই সভা অংশ নিলেও তিনিও ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করে সভা ত্যাগ করে চলে এসেছেন।”
যদিও তিতুমীর কলেজের স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নতুন উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা এপ্রিলেই
সরকারি সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে গত ২৯ ডিসেম্বর চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান।
আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক তানজীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সময়ের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে, আমরা রূপরেখা প্রণয়নের কাজ অনেক দূর করে ফেলেছি।”
কবে থেকে সাত কলেজ স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অধীনে যাবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “সে জন্য সময় লাগবে। কারণ আমাদের রূপরেখাটি আইন আকারে সংসদ ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়ে আসতে হবে। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় এটি অধ্যাদেশের মাধ্যমেও আইন হিসাবে রূপ পাওয়া সম্ভব।”
“আমরা রূপরেখা প্রস্তুত করে শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে বসব। তার সামনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তবে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তরের আগে কলেজগুলোর বিষয়ে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন কাঠামো সুপারিশ করেছি, যেটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে।”
সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে টাইম ও স্পেস শেয়ার করবে। যে কলেজগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় আছে সেগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থাকবে। সেভাবে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।”
ঢাকা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু রয়েছে।