
রাজধানীর গুলশানে ৩৩ কাঠার ওপর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটসহ দুটি বাড়ি, বনানীতে ফ্ল্যাট এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দুটি বাণিজ্যিক ফ্লোরের মালিক। ঢাকার গুলশান, মিরপুর, তেজগাঁওসহ সারা দেশে রয়েছে তিন শতাধিক বিঘা জমি। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে শতকোটি টাকার বেশি ডিপোজিটসহ নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। ছয়টি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপ অব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। সারা দেশে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) বর্তমান চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান। অথচ কর ফাঁকি দিতে সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন তিনি। আয়কর নথিতে সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২১ কোটি টাকা। শুধু তিনিই নন, অঢেল সম্পদের মালিক তার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েও। তাদের আয়কর নথিতেও রয়েছে অসামঞ্জস্য। সাউথ বাংলা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও কর ফাঁকির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কালবেলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। শুধু সম্পদের তথ্য গোপন নয়, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজের আয়কে বৈধ করতে নিয়েছেন নানা ধরনের জালিয়াতির আশ্রয়।
কালবেলার নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোখলেসুর রহমানের কর ফাঁকির নানা তথ্য মূলত সামনে আসে সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে। এক সময়ের জেমকন গ্রুপের এই কর্মী ছয়টি কোম্পানির নামে গড়ে তোলেন বিঅ্যান্ডটি গ্রুপ। তবে কোম্পানি ছয়টি হলেও তার আয়কর নথিতে রয়েছে কর-সংক্রান্ত নানা অসংগতি। সর্বশেষ অর্থবছরের আয়কর নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৩১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার, নিজের কোম্পানিতে ঋণ প্রদানসহ আর্থিক সম্পদ রয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যবসায়ীক মূলধন, লিমিটেড কোম্পানির মালিকানা, নির্মাণাধীন বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স হিসেবে সম্পদের পরিমাণ ৪১ কোটি টাকা। আর কৃষি এবং অকৃষি সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২১ কোটি টাকা, যদিও আয়কর নথিতে এসব সম্পদের কোনো বিবরণ নেই।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাসের অনুসন্ধানে কালবেলার হাতে এসেছে মোখলেসুর রহমানের অপ্রদর্শিত অঢেল সম্পদের তথ্য। বিশেষ করে বাস্তব আর নথিতে প্রদর্শিত কৃষি এবং অকৃষি সম্পত্তির ব্যাপক অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি স্ত্রী সন্তানদের সম্পদের তথ্যও উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিঅ্যান্ডটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোখলেসুর রহমানের নামে সারা দেশে ৩০০ বিঘা বা ৬ হাজার কাঠা (১ বিঘা সমান ২০ কাঠা) বেশি জমি রয়েছে। এ ছাড়া গুলশানে ১৫ কাঠার ওপর একটি ৫ তলা এবং প্রায় ১৮ কাঠার ওপরে ৭ তলা বাড়ি। এর মধ্যে গুলশানের ১০৭ নম্বর রোডের রাজউকের ১৮ নম্বর প্লটে ১৫ কাঠার ওপর ৫ তলা একটি বাড়ি। আরেকটি গুলশানের একই রোডের ২৫/বি প্লটে প্রায় ১৮ কাঠার ওপরে ৭ তলা বাড়িটিরও মালিকানায় রয়েছেন তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর বি ব্লকের ৮০ নম্বর প্লটে একটি ১৫ তলার বাণিজ্যিক ভবনেরও মালিক তিনি। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ারে দুটি বাণিজ্যিক ফ্লোরও রয়েছে তার। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তার নামে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। আর এসব তথ্য মোখলেসুর আয়কর নথিতে গোপন করেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ভূমি মন্ত্রণালয়, এনবিআর, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে মোখলেসুর রহমানের এসব সম্পদের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তার নামে নামজারি করা জমির মধ্যে রয়েছে ঢাকার গুলশানে ১৫ দশমিক ৭৯ শতক, মিরপুরে ৮ দশমিক ২৫ শতক এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ২ দশমিক ২৯ শতক জমি। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় ৬৩ দশমিক ৫০ শতক, জীবননগরে ৩ হাজার ৬৭৭ দশমিক ৫ শতক, দামুড়হুদায় রয়েছে ৬২ দশমিক ১৩ শতক। ঝিনাইদহ জেলার এক মহেশপুর উপজেলায় রয়েছে ৩ হাজার ৯৫২ দশমিক ৭৪ শতক। পঞ্চগড় জেলার সদরে কিনেছেন ২ হাজার ২২৪ শতক, যার বেশিরভাগই বাণিজ্যিক এলাকা।
সরকারি মূল্য হিসেবে এসব জমির দাম একেক জায়গায় একেক রকম। সরকারি হিসাবে গুলশান এলাকায় জমির মূল্য কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা আর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আবাসিক ৬০ লাখ এবং বাণিজ্যিক দেড় কোটি টাকার বেশি। আর চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও পঞ্চগড়ে যেসব এলাকায় মোখলেসুর রহমানের জমি রয়েছে, সেসব জমির দাম কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। একেক জায়গায় জমির দাম একেক রকম হওয়ায় সঠিক মূল্য যাচাই করতে পারেনি কালবেলা।
তবে সরকারি হিসাবে ঢাকাসহ সারা দেশের জমির দাম কাঠাপ্রতি গড় হিসেবে ২ লাখ টাকা ধরে হিসাবে করলেও ৩০০ বিঘার দামে আসে ১২০ কোটি টাকা। অথচ মোখলেসুর রহমানের আয়কর নথি বলছে, তার সম্পত্তি রয়েছে মাত্র ২১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিনি প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। আর যদি সর্বনিম্ন হিসাবে কাঠাপ্রতি ১ লাখ টাকা হিসাব করা হয়, তাহলেও তার জমির দাম হয় ৬০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও আয়কর নথিতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার তথ্য গোপন করেছেন।
তবে মোখলেসুর রহমানের যেসব সম্পত্তির তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সরকারি হিসাবেও এসব সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। কিন্তু আয়কর নথিতে তার সম্পত্তির মূল্য সরকারি হিসাবেরও সাত ভাগের এক ভাগ প্রদর্শন করা হয়েছে। মূলত আয়কর ফাঁকি ও আয়ের উৎস গোপন রাখতে এই কৌশল নিয়েছেন মোখলেস।
শুধু নিজের সম্পত্তির তথ্য গোপন করেই ক্ষান্ত হননি মোখলেসুর রহমান। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে সপরিবারে করছেন এমন ঘটনা। নিজের স্ত্রী-সন্তানের আয়কর নথিতেও রয়েছে বড় ধরনের ঘাপলা। নিজ কোম্পানিতে পদ দিয়ে স্ত্রী-সন্তানরাও শত শত কোটি টাকার মালিক। তাদের আয়কর নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে সম্পদ রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু তথ্য বলছে, বনানীর এফ ব্লকের ২ নম্বর রোডের ৭৮ নম্বর ৬ তলা বাড়িটির মালিক কামরুন নাহার। এ ছাড়া গুলশানে তার নামে দুই ফ্লোরের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। ট্যাক্স ফাইলের তথ্য অনুযায়ী, বনানীতে তার ফ্ল্যাটও রয়েছে। আয়করের নথিতে ২৬ বছর বয়সী মেয়ে মায়েশা মালিহার নামেও ১৩২ কোটি টাকার সম্পদ। যদিও মেয়ে সাবালিকা হয়েই পেয়ে যান সাড়ে ৮ কোটি টাকার সম্পদ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের খোলা ট্যাক্স ফাইলে সেই সময় মেয়ের সম্পদ দেখানো হয় ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ১০ বছরের সেই সম্পদ বেড়েছে ১২৪ কোটি টাকা। আর ৩২ বছর বয়সী ছেলে মুশফিকুর রহমানের সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ১৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ সালের আয়কর নথিতে তার নামে সম্পদ দেখানো হয়েছিল ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১২ বছরের ছেলের সম্পদ বেড়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
নিজেদের কোম্পানির পরিচালক হওয়ার সুবাধে স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের নামে এত সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, নিজের অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দিতেই তিনি স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের নামে সম্পদ লিখে দিয়েছেন, যাতে তার উপার্জিত অর্থ সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।
বিঅ্যান্ডটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোখলেসুর রহমানের বিরুদ্ধে করবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পাশাপাশি সদ্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের নিয়োগ পদোন্নতি নিয়েও তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন মোখলেসুর রহমান। এর আগে তিনি ওই ব্যাংকের ডিরেক্টর ছিলেন। জানা গেছে, মোখলেসুর রাহমান সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। যার জেরে গত ১৬ মার্চ পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিবুর রহমান। এর আগেও চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় একজন পরিচালক এবং এএমডিও পদত্যাগে বাধ্য হন। নতুন চেয়ারম্যানের অনৈতিক হস্তক্ষেপ, বেনামি ঋণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির জেরে ব্যাংকটিতে এ অস্থিরতা চলছে বলে অভিযোগ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যাংকের সর্বশেষ পর্ষদ সভায় ‘ওয়ান স্টিচ লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানির জন্য ৫৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ প্রস্তাব পাস হয় গত ১৬ মার্চ। এ ঋণসহ বিভিন্ন বেনামি ঋণের বিষয়ে ব্যাংকটির পরিচালকদের একটি অংশ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান ঋণটি অনুমোদনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত ঋণ প্রস্তাবটি পাস হলে পদত্যাগ করেন এমডি হাবিবুর। পদত্যাগের বিষয়ে যদিও হাবিবুর রহমানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসবিএসি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, মোখলেসুর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার পরপরই ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করতে উদ্যোগী হন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চলতি বছরের শুরুতে এএমডি নুরুল আজিমকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া কিছুদিন আগে একজন পরিচালকও পদত্যাগে বাধ্য হন। নিজের পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি নীতিমালা ভঙ্গ করে অন্য ব্যাংক থেকে কয়েকজনকে নিয়ে আসছেন। তার কারণে এমনিতেই এমডি হিসেবে হাবিবুর রহমানেরও তেমন কোনো ক্ষমতা ছিল না।
অভিযোগ রয়েছে, ডিরেক্টর থেকে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রমে অবৈধ হস্তক্ষেপ করছেন মোখলেসুর রহমান। পাশাপাশি নিজ সিন্ডিকেটের ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে তৎপর হয়েছেন। চেয়ারম্যান হওয়ার কিছুদিন পরই এনআরবিসি ব্যাংকের অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) রবিউল ইসলামকে সাউথ বাংলার এএমডি হিসেবে নিয়োগ দিতে তৎপর হন তিনি। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ওই পদের জন্য দুদকের মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি রবিউল ইসলামকে অফার লেটার পাঠান মোখলেসুর রাহমান।
এদিকে, চেয়ারম্যানের এমন অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানোর কারণে সম্প্রতি ওই ব্যাংকের এক বোর্ড সদস্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জানা গেছে, যথাযথভাবে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই একক আধিপত্যে এএমডি পদে রবিউল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদানের প্রস্তাবের বিষয়ে আপত্তি জানান বোর্ডের সদস্য ইমদাদুল হক। ওই বোর্ড সদস্যের লিখিত আপত্তির গোপন কপি এসেছে কালবেলার হাতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদত্যাগ করা বোর্ড সদস্য ইমদাদুল হক কালবেলাকে বলেন, নিয়োগের বিষয়ে কোনো প্রকার নিয়ম মানা হয়নি, বোর্ডের অনুমোদন দরকার হলেও সেটা নেওয়া হয়নি।
সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েকদিন ধরে বারবার চেষ্টা করেও মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও হয় কেটে দেন, নয়তো রিসিভ করেননি। তবে তার ছেলে মুশফিকুর রহমান কল রিসিভ করলেও অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও ব্যাংকের বিভিন্নজনের কাছে তিনি বলে থাকেন, তার সম্পদ এমনভাবে করা হয়েছে, যা কেউ চাইলেও ধরতে পারবেন না।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আয়করের নথিতে সম্পদের তথ্য গোপন করা রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সম্পদের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দিলে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি উনি কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, সেটাও তদন্ত করা উচিত। এএমডি পদে মামলার আসামিকে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, যার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে, তার মতো একজনকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং দুর্নীতির শামিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
মোখলেসুর রহমানের উত্থানের বিষয়ে জানা যায়, বিঅ্যান্ডটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোখলেসুর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি নাবিলের মালিকানাধীন জেমকন গ্রুপে প্রকৌশলী পদে চাকরি করতেন। পরে তিনি নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গায় একটি পোল ফ্যাক্টরি করেন। কনটেক কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কোম্পানি দিয়ে যাত্রা শুরু করা মোখলেসুর ধাপে ধাপে ছয়টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিঅ্যান্ডটি গ্রুপ অব কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে তরতরিয়ে তার সম্পদ বাড়তে থাকে। তার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরুতে তেমন কিছু না থাকলেও বর্তমানে মোখলেসুর রহমান অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।