Image description

পিনাকী ভট্টাচার্য

এক ইউটিউবার দাবী করেছে আরেক ইউটিউবার নাকি ছড়িয়েছে ওয়াকার ইন্ডিয়ান মাল। সেই ইউটিউবার কনফার্ম করছে ইন্ডিয়ান মাল হওয়া বাংলাদেশে অসম্ভব। কারণ ইন্ডিয়া নামটাই এখন বিশাল ঝামেলার। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নাকি ইন্ডিয়ান সংস্রব এড়ায়ে চলেন। এইটা উনি নিশ্চিত ভাবে জানেন। আমরা আমজনতা আমরা কেমনে গুরুত্বপূর্ণ লোকেদের খবর জানবো। উক্ত ইউটিউবার তার ক্ষমতাবান শ্বশুরের কথা জানতে পারেন, আই এগ্রি। কিন্তু ধরেন আর্মি র‍্যাংক এন্ড ফাইলের সাথে ইন্ডিয়ান ইন্টারএকশনের কথা ঐ ইউটিউবার জানে কেমনে? আর্মির কারোই কি এইটা একজন সিভিলিয়ানদের সাথে শেয়ার করা উচিৎ? আর তার সেইটা প্রকাশ্যে বলে দেয়া উচিৎ? 
এখন তো উনার শ্বশুরের সাথে ইন্ডিয়ানেরা কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না। কিন্তু ঐ ইউটিউবারের কথা কি সত্য? না সত্য নয়। ওই ইউটিউবারের শ্বশুর একাধিকবার প্রকাশ্যে ইন্ডিয়ানদের সাথে মিটিং করেছেন। ওয়াকার পাচ তারিখে সার্বক্ষণিকভাবে ইন্ডিয়ান চিফের সাথে কানেক্টেড ছিলেন। এইটা আমার কথা না ইন্ডিয়ান চিফের কথা। এক সপ্তাহও হয় নাই ইন্ডিয়ার সাথে যৌথ নৌ মহড়া করছে এই সেনাবাহিনী।


প্রশ্নটা তো সেইটা না। প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়াকার বলে 'ইনক্লুসিভ ইলেকশন', ইন্ডিয়া বলে 'ইনক্লুসিভ ইলেকশন'; কেন? কেন ওয়াকারকে রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে হয়? এই রাজনীতি সচেতনতা কেন ইন্ডিয়া আর ওয়াকারের ২০২৪ এ ছিলোনা?
জেনারেল ফয়েজকে আর্মি চিফ বানানোর কিচ্ছা আনছে তাসনীম খলিল। আমরা যারা ওয়াকারের বিরোধীতা করতেছি তার অপসারণ চাইতেছি তারা কেউই এই আলাপ তুলি নাই। জেনারেল ফয়েজকে জবাব দিতে হবে কেন আয়নাঘরের আলামত নষ্ট করা হইছে সেই সময়েই, যেই সময়ে সে ডিজিএফআইয়ের চিফ ছিলো। আমরা এখনো সেই প্রশ্ন তুলি নাই, তুলবো যথাসময়ে। 


ওয়াকার সাহেব হাসিনার বোন জামাই। সে বোন জামাই কোটায় সেনাপ্রধান হইছে। সে সর্বশক্তি দিয়া হাসিনাকে রক্ষার চেষ্টা করছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। পারে নাই। তার কমান্ড ফেইলিওর হইছে। এই কমান্ড ফেইলিওর অবধারিত ছিলো। 
সেনাবাহিনী কে নিজেদের ইচ্ছা মত ব্যাবহার করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন সেটা হচ্ছে “কমান্ড” তা ভাইঙ্গা পড়ছিলো। কেননা অল্প কিছু “ভেড়ার” কমান্ড সংখ্যা গরিষ্ঠ “বাঘ” উপেক্ষা করেছিলো। 


সেনাবাহিনীতে “কমান্ড” একটি ভাবগত এবং অতি শক্তিশালী বিষয়, যেটা কখনোই পদ পদবী দিয়ে অর্জিত হয় না। বেশিদুর যাওয়া লাগবে না, ২৪ এর গন বিপ্লবেই এর উদাহরন আছে। অল্প বয়স্ক কয়েকজন অচেনা ছাত্র দের ডাকে সারা বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলো যে কারনে সেটা হচ্ছে “কমান্ড”। ঠিক যে “কমান্ড” এর কারনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলো, সেই একই “কমান্ড” পাত্তা না দেয়ায় সেনাবাহিনী দিয়ে হাসিনা কে টিকিয়ে রাখা যায় নি। এই কমান্ড এর মূল উদ্দীপক হচ্ছে “কারনের সঠিকতা” যেটাকে মিলিটারি ভাষায় বলে “rightness of the cause”. 


সেনাবাহিনী তে এই “rightness of the cause”  এর কারনেই সৈনিক যুদ্ধে গিয়ে প্রাণ দেয়। এই “rightness of the cause” যে তৈরি করতে পারবে সেই মিলিটারি লিডার হয়। হাসিনার বানানো মিলিটারি লিডাররা “rightness of the cause” কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। সে কারনেই “rightness of the cause” এর  অভাবে ২৪ এ শেখ হাসিনাকে সেনাবাহিনী দিয়ে  মিলিটারি লিডাররা রক্ষা করতে পারেনি। 


সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে ২৪ এর বিপ্লবের পরে সেনাবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাহিনীর মতো সেনাবাহিনীতেও হাসিনার এবং ভারতের দালাল সমৃদ্ধ যে লিডারশিপ সেই লিডারশিপের পরিবর্তন চেয়েছিল।  কিন্তু সেই লিডারশিপ  কমান্ড ফেইলিওরের কারনে যে হাসিনা কে রক্ষা করতে পারেনি, সেটা কে বেসামরিক মানুষের কাছে বুঝতে না দিয়ে এইভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে যে, “সেনাবাহিনী জনগনের পক্ষ নিয়েছে বলে হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে” - যেটা শত ভাগ মিথ্যা। 
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে  রেখে যাওয়া ভারতের দালাল মিলিটারি লিডারশিপ কিভাবে কমান্ড পুনরায় প্রতিষ্ঠা করবে,  তা তাদের জানা নেই।  এ কারণে, পুনরায় তারা ভারতের ফর্মূলার দ্বারস্থ হয়েছে। ভারত থেকে আবার একই ফর্মূলা দেয়া হয়েছে। 
ওয়াকার সেই প্লে বুকে খেলতেছে।


ইউটিউবার বলছে, পলিটিক্স ব্রুটাল গেইম। জ্বি, সেইটা জানি। জানি জন্যই আমি এখনো রিফিউজি, দেশে যাইতে পারি নাই। জানি জন্যই বত্রিশ নাম্বার জয় বাংলা করার পর আমার নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আওয়ামী লীগ। ওই জানের ভয় করলে তো রাজনীতিতেই নামতাম না।
ইউটিউবার বিএনপির ব্যাকল্যাশের ভয় দেখাইছে। হাসি আসিছে। কুঁজোরও চিৎ হইয়া শোয়ার শখ হয় মাঝে মাঝে। যেই দল ক্ষমতায় থাইক্যা ওয়ান ইলেভেন ঠেকাইতে পারে নাই। ২৮ শে অক্টোবর প্রাণের ভয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারে নাই সেই দল কুৎসিত ব্যাকল্যাশের ভয় দেখায় কোন কলিকাতা হারবালের জোরে তা আমাদের জানা আছে। 
বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-আওয়ামীলীগ-ওয়াকার-ইন্ডিয়া অক্ষশক্তিকে ডরায় না।


ক্ষুদ্রকালে দেখা বখতিয়ার খলজি যাত্রার একটা ডায়ালগ মনে আসলো। বখতিয়ার কইতেছে,
"শাহজাদী সম্রাটনন্দিনী মৃত্যুভয় দেখাও কাহারে, জানোনা কি তাতার বালক মাতৃ অঙ্ক হতে ছুটে যায় সিংহশিশু সনে করিবারে মল্লরণ? জীবনের ভয় দেখাও শাহজাদী? বখতিয়ার মরিতেপ্রস্তুত সদা।"