
মাঝারি ও বড় সংবাদমাধ্যমকে একটি সময়সীমার মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব করে ব্যাংকিং খাতের মত এসব কোম্পানির মালিকানাতেও সর্বোচ্চ শেয়ার রাখার সীমা বেঁধে দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন।
শনিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাতে উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ারধারণের সর্বোচ্চ সীমা ২৫ শতাংশের মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিন দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ব্যাংকিং খাতে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক পারিবারিকভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারধারণ করতে পারেন না। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একই সময়ে পরিবার থেকে থাকতে পারেন সর্বোচ্চ তিনজন।
“কিন্তু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এক্ষেত্রে তাই পরিবর্তন প্রয়োজন।”
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, “কমিশন প্রথম পর্যায়ে মাঝারি ও বৃহৎ মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে সর্বসাধারণের জন্য শেয়ার ছাড়া ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সমীচীন মনে করছে।
“উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেয়ারধারণের সীমা ২৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে শেয়ারবণ্টন বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।”
এক্ষেত্রে কর্মীদের কত শতাংশ শেয়ার থাকবে, তাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, “কর্মীদের শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশেই সীমিত রাখতে হবে, যেন উদ্যোক্তারা কর্মীদের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন।”
ছোট আকারের মিডিয়া কোম্পানিতে কর্মীদের শেয়ার দেওয়া বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে।
দেশে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় একাধিক গণমাধ্যম রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশে ‘ক্রস-ওনারশিপ’ নিষিদ্ধ রয়েছে।
ভারতেও এ ধরনের একটি বিল পার্লামেন্টে আলোচনার অপেক্ষায় আছে তুলে ধরে কমিশন বলেছে, “আমাদের দেশেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত ও প্রজ্ঞাপন হয়েছিল বলে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ গণমাধ্যম কমিশনের কাছে লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছিলেন।
“তবে সেই প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্পষ্টতই সরকারগুলো ওই নীতি অনুসরণ করেনি।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, “কমিশন মনে করে, আমাদেরও অচিরেই অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ক্রস-ওনারশিপ নিষিদ্ধ করে অর্ডিন্যান্স জারি করা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এটি বিদ্যমান, সেগুলোয় পরিবর্তন আনার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তাদের ব্যবসা পুনর্গঠনের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো নানা পদ্ধতিতে হতে পারে।
“যেসব কোম্পানি/গোষ্ঠী/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি/পরিবার একই সঙ্গে টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক, তারা যে কোনো একটি গণমাধ্যম রেখে অন্যগুলোর মালিকানা বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে পারে। অথবা দুইটি মিডিয়ার (টেলিভিশন ও পত্রিকাকে) সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একত্রিত করে আরও শক্তিশালী ও বড় আকারের একটি মিডিয়া (টেলিভিশন অথবা দৈনিক পত্রিকা) পরিচালনা করতে পারে।”
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে একটি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন ওই কমিশনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ সদস্য ছিল নয়জন।
এ তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি দ্য ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্সের (অ্যাটকো) প্রতিনিধি এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ও সাংবাদিক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।