Image description
 

চা বিক্রির টাকায় একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া। সেখানে গড়ে তুলেছেন এতিম, দুস্থ শিশুসহ সবার জন্য জন্য একটি একাডেমিক মাদ্রাসা। যেখানে শীঘ্রই হাফেজিয়া শাখা তৈরি করা হবে।

কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি হাজরাদী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে প্রায় দুই যুগ ধরে চা বিক্রি করছেন রুবেল মিয়া। তার বাবা হাসিব মিয়া এ চায়ের দোকান তৈরি করেন। রুবেল মিয়াও বাবার পাশাপাশি চায়ের দোকানে কাজ করা শুরু করেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর পড়াশোনা ছেড়ে পুরাদস্তুর একজন চা বিক্রেতা হয়ে উঠেন। পরিবারের হাল ধরেন।

বিশেষ এক মালাই চা বিক্রি করে বছর না ঘুরতেই মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেন এ চা বিক্রেতা। সাবদি পর্যটন এলাকা হওয়ায় তার এ চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলায়।

সৌভাগ্যক্রমে আর্থিকভাবেও ব্যাপক উপার্জন শুরু হয়। যেই উপার্জিত অর্থে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার। ২০ লাখ টাকা দিয়ে তার ভাইয়ের কাছ থেকে ৯ শতক জমি কিনেন। যে জমির বর্তমান মূল্য অর্ধকোটি টাকা। যেই জমিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন মাদ্রাসা। মাদ্রাসা নাম দিয়েছেন, “কাদেরিয়া তাহেরিয়া সাবেরিয়া হাসিবিয়া মাদ্রাসা”।

বন্দর উপজেলার সাবদিতে রুবেল মিয়ার চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা মিলে তার। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এক কাপ মালাই চায়ের টানে তার দোকানে ছুটে আসছেন চা-প্রেমীরা। এছাড়াও দুধ চা, হরলিক্স চা, ডাবল মালাই চা, মালাই দুধ, কফিসহ কয়েক ধরনের ঘরে বানানো মিষ্টি বিক্রি করেন তিনি।

রুবেল মিয়া বলেন, “আমি অল্প বয়সেই বাবার সঙ্গে চা বিক্রি শুরু করি। কিন্তু ২০১৫ সালে আমি একটা বিশেষ মালাই চা বানাই। এক কেজি দুধে হয় মাত্র চার কাপ মালাই চা। এ চা খেতে অনেক দূর থেকেও মানুষ আসে। আমি প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ কাপ চা বিক্রি করি। দুধ চা ১৫ টাকা, মালাই চা ৪০ টাকা ও ডাবল মালাই চা ৭০ টাকা দামে বিক্রি করি। এ মালাই চা দিয়েই আল্লাহ আমার দিকে তাকাইছে। আমার ভালো একটা আয় হইছে যা দিয়া আমি আবার শিশুদের কোরআন পড়াশোনার জন্য জায়গা তৈরি করছি।”

রুবেল মিয়া তার কেনা ৯ শতক জমি কিনে আঞ্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টে দান করেন। পরবর্তীতে গ্রামবাসীর সহায়তায় এখানে মাদ্রাসা গড়ে তুলেন।

রুবেল মিয়া মাদ্রাসা প্রসঙ্গে বলেন, “আমি বেশি পড়ালেখা করতে পারি নাই। এজন্য আমার ইচ্ছা ছিল একটা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওয়ার। আমি সেটা শুরু করতে পেরেছি। এখন আমি এ মাদ্রসাকে  টিনশেড থেকে ১০তলা ভবন গড়ার স্বপ্ন দেখি। যেখানে গরিবরা বিনা পয়সায় পড়াশোনা করে হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করব।”

স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, “সাবদি নদীর পাশে হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। তাদের কাছে রুবেল মিয়ার চায়ের ভালো কদর আছে। রুবেল ভাই একটা মাদ্রাসা দিছে এতে করে আশেপাশের শিশুরা বাংলা আরবি দুটোই ভালোভাবে শিখতে পাড়তেছে। আজকাল কে নিজের জমি দেয়। আর সে এতো টাকার জমি দান করে ফেলছে। তার এ কাজে এলাকায় সবাই তাকে অনেক সম্মান করে।”

জানা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মাদ্রাসাটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এখানে শিক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। সাতজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে মাদ্রাসাটিতে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে।

কাদেরিয়া তাহেরিয়া সাবেরিয়া হাসিবিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মোতালিব সরকার বলেন, “রুবেল মিয়া এ মাদ্রাসার জমি দান করেছেন। তিনিসহ আরও কয়েকজনের আর্থিক সহায়তায় এ মাদ্রাসা চলতেছে। রুবেল মিয়ার এ মাদ্রাসার উন্নয়নকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন আছে। আমরা দোয়া করছি, আল্লাহ তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাকে সহায়তা করুক।”