
অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায় থেকে মুক্তি মেলায় অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সাকিব আল হাসান। গত ছয় মাস ধরে মাঠের ভেতরে এবং বাইরে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে অন্তর্ভুক্ত করেনি। কারণ তারা তাকে কেবল একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে নিতে চায়নি। ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা মনে করেন, পুরো বিষয়টি বিসিবি আরও ভালোভাবে সামলাতে পারতো।
ক্রিকবাজকে সাকিব বলেছেন, ‘দেখুন, আমার কোনও অভিযোগ নেই, তবে যোগাযোগের বিষয়টা যদি আরও ভালো হতো, তাহলে আমি বেশি খুশি হতাম’
বলা হচ্ছে, সাকিব বোলিং পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে তার শৈশবের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে এক সপ্তাহের ক্যাম্প করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। যে কারণে শুরুর দিকে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সারে ও সমারসেটের মধ্যকার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য রিপোর্টেড হন বাহাতি এই স্পিনার। এরপর, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তার অ্যাকশনকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে বোলিং থেকে নিষিদ্ধ করে।
পরবর্তীতে সাকিব ইংল্যান্ড ও ভারতে দুটি পৃথক পুনর্মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু উভয় পরীক্ষাতেই ব্যর্থ হন, যার ফলে তার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে।
সাকিব বোর্ডকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে রাখা হয়, কারণ সেটা হলে তিনি সালাউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেতেন এবং বোলিং পরীক্ষার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারতেন। কিন্তু বিসিবি তার অনুরোধ উপেক্ষা করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে অনেকেই মনে করেন, বিসিবির এই সিদ্ধান্ত সাকিবের পরিকল্পনা অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ার সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের হতাশাজনক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পারফরম্যান্সের পর, বিসিবি এখন হয়তো ভাবছে যে তারা বিষয়টি আরও ভালোভাবে সামলাতে পারত। বিশেষ করে, যখন সাকিব দুই সপ্তাহ ধরে সারের প্রধান কোচ গ্যারেথ ব্যাটির সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমের পর বোলিং পরীক্ষায় পাস করলেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে নিপু নামে পরিচিত সিরাজুল্লাহ খাদেম, ইংল্যান্ডে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়ায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। সাকিবের শৈশবের বন্ধু নিপু সম্প্রতি ক্রিকবাজকে বলেছেন, ‘যাত্রাটা খুব কঠিন ছিল না এবং সাকিব খুব বেশি চাপেও ছিল না। সে জানতো তাকে কী করতে হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আগের দুই পরীক্ষায় সে একটু তাড়াহুড়ো করেছিল। এবার সে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল, যার ফলে সে সফল হয়েছে। আমরা প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অনুশীলন করেছি এবং পরীক্ষার আগে সে ব্যাপকভাবে বোলিং অনুশীলন করেছে।’
২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সাকিব, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের সঙ্গে খেলা নিপু আরও বলেন যে, সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার মূল কারণ ছিল অতিরিক্ত বোলিংয়ে সৃষ্ট দৈহিক ক্লান্তি, ‘আমি মনে করি, সে ম্যাচটিতে অনেক বেশি ওভার বোলিং করেছিল। যখন আপনি ক্লান্ত হয়ে অতিরিক্ত চাপ দেন, তখন আপনার অ্যাকশনে ছোটখাট পরিবর্তন আসতে পারে, যা সমস্যার সৃষ্টি করে। এখন তাকে বেশ ধারালো দেখাচ্ছে এবং তার সব রকমের বোলিং কৌশল ফিরে পেয়েছে।’
এর আগে কখনও অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য রিপোর্টেড না হওয়া সাকিব গত ৯ মার্চ লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ে বোলিং মূল্যায়নের তৃতীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
অবৈধ অ্যাকশন থেকে মুক্তি মেলায় এখন দেখার বিষয় বিসিবি তাকে আবার জাতীয় দলে ফেরানোর কথা ভাবে কিনা। কারণ, অতি সম্প্রতি সাকিবকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও বাদ দিয়েছে বিসিবি।