Image description

রাজধানীর গুলশানে সুমন (৩৩) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। এ ঘটনার পর আলোচনায় এসেছে একে-৪৭ নামের একটি গ্যাং। সুমন আগে এর সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে বেরিয়ে এসে আলাদা গ্যাং তৈরি করায় দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত ৯টার দিকে পুলিশ প্লাজার পাশে শুটিং ক্লাবের সামনে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটে।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের মামলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন অপরাধ জগতে তিনি ‘শুটার’ হিসেবে পরিচিত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিহত সুমন স্থানীয় জেল ফেরত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর ঘনিষ্টজন হিসেবে কাজ করছিলেন। এ কারণে অনেকেরই চক্ষুশুল হয়ে পড়েছিলেন। মহাখালী এলাকার বিভিন্ন সরকারী অফিসে টেন্ডার, ডিশ, ইন্টারনেট ব্যবসায় শুরু হয়েছিল অস্থিরতা।

‘একে-৪৭ গ্যাং’ গ্রুপের নিয়ন্ত্রক টিবি গেট এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেল ও তার বোন জামাই সেন্টু। গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই বিরোধের জেরে একে-৪৭ গ্রুপের হাতে খুন হন সুমন। তিনিও ‘বন্ধু গ্যাং’ নামে একটি গ্রুপ চালাতেন। সেন্টু ওই এলাকায় ‘টিবি গেটের দুলাভাই’ ও ‘টিবি গেটের জামাই’ হিসেবে পরিচিতি।

এক সময় সুমনও একে-৪৭ গ্যাংয়ের হয়ে কাজ করতেন। সেখান থেকে বেরিয়ে পাঁচ-সাত বছর হয়েছে বন্ধু গ্যাং গড়ে তোলেন। এর পর থেকে দুই গ্রুপের ঝামেলা শুরু। মূলত এলাকায় চাঁদাবাজি, আধিপত্য ও ফুটপাত বাণিজ্য নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ২০২০ সালে রোজায় একবার একে-৪৭ গ্রুপের টার্গেট হন সুমন। হামলার শিকার হলেও তখন ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঘটনাস্থলের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখাতে অস্ত্র হাতে যাদের পালাতে দেখা গেছে, তাদের নাম-পরিচয় শনাক্তে মাঠে কাজ চলছে। নাম পরিচয় পাওয়া গেলে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হলেও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এদিকে শুক্রবার রাতে নিহত সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার গুলশান থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা (নম্বর-৩২) করেন। এজাহারে মৌসুমী আক্তার উল্লেখ করেন, তার স্বামী মহাখালী টিবি গেট এলাকায় প্রিয়জন নামক ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

ইন্টারনেট ব্যবসার কারণে একই এলাকায় তার কিছু প্রতিপক্ষ গ্রুপ সৃষ্টি হয়। এ প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন সময় সুমনকে মেরে ফেলার জন্য বিভিন্ন হুমকি দিত। জীবনের ঝুঁকি আছে বলে সুমন প্রায় সময় তার স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। এছাড়া সুমনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় কিছু লোকের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের পূর্ব দিকের রাস্তার পাশের বেঞ্চে বসে বিশ্রাম করাকালে সুমনকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। তখন জীবন রক্ষার্থে সুমন দৌড়ে গুলশান শুটিং ক্লাবের দিকে যাওয়ার সময় রোড ডিভাইডারের কাছে পড়ে যান।

গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে সুমনকে উদ্ধার করে পুলিশ চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান তারা। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।