
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকায় গুলিতে রাজু আহমেদ নামে এক আন্দোলনকারী নিহত হন। একজন আনসার সদস্য তাকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু ওই আনসার সদস্যের পরিচয় শনাক্ত করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়ে পুলিশের তদন্তকারীরা। অবশেষে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ, এআই প্রযুক্তি, ফেস ডিটেক্টর এবং নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভারে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ছবি সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে শনাক্ত করতে সহায়তা করে। পরে নানা কৌশল অবলম্বন করে বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার আমাদের সময়কে বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী হিসেবে এ পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে কয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সরাসরি গুলিবর্ষণকারী হিসেবে প্রথম সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হলো।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুলিশের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুক নিরস্ত্র রাজু আহমেদকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দিয়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে তার চেহারা শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনে থাকা তার ছবির সাথে মিলিয়ে ওমর ফারুককে শনাক্ত করা হয়। একই প্রক্রিয়ায় আরও বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
জানা গেছে, কয়েক মাস আগে ওমর ফারুক আনসারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে চলে যায়। সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। সেখান থেকেই ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে আনসারের সাবেক এই সদস্য রাজু খুনের দায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। সে বলেছে, নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে গুলি করা তার ঠিক হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪শ মামলা রুজু হয়েছে ৫ আগস্টের পর। এসব মামলায় ইতোমধ্যে পুলিশের প্রায় ১ হাজার ৪৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসানসহ আলোচিত বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই বিদেশ পাড়ি দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে, তাদের প্রত্যেকেরই পরিচয় শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এর মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে, তাদের শনাক্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তর এআই প্রযুক্তি, ফেস ডিটেক্টর এবং এনআইডিতে থাকা ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আর এ কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখছে।