
বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্ত নিয়ে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থের সন্ধান কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ধরনের ‘বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’ চালানো হতে পারে বলে মনে করছেন এমপিরা। সোমবার (২৪ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরকে নিয়ে সন্দেহজনক ই-মেইল পেয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতন হওয়ার পর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল সম্পদের সন্ধানে যুক্তরাজ্য সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাইছেন। আহসান মনসুর সন্দেহ করছেন, হাসিনা সরকারের সহযোগীরা যে সম্পদ লুট করেছে, তার একটি অংশ যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনার কাজে ব্যবহার হতে পারে।
ব্রিটিশ এমপিরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি তদন্তের প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কারণ আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
‘ভুয়া সাংবাদিকদের’ মাধ্যমে প্রচারণা
যুক্তরাজ্যের ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ’ (এপিপিজি)-এর ৪৭ জন এমপির একটি দল সোমবার আহসান মনসুরের সঙ্গে বৈঠকের আগে কিছু ই-মেইল পান। এসব ই-মেইলের প্রেরকরা নিজেদের সাংবাদিক দাবি করে মনসুরের মেয়ের বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্পর্কে ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট’ নামে এক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিংক পাঠিয়েছেন।
কিন্তু দ্য গার্ডিয়ান অনুসন্ধান করে জানতে পারে, এই প্রতিবেদনের লেখকদের কোনো সাংবাদিকতার পরিচয় নেই এবং তাদের ছবি আসলে স্টক ইমেজ। এতে সন্দেহ আরও বেড়েছে যে, এটি আহসান মনসুরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হতে পারে।
আহসান মনসুরের প্রতিক্রিয়া ও এমপিদের উদ্বেগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, যারা মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তের আওতায় রয়েছে, তারা আমার সুনাম নষ্ট করতে এবং আমাকে বিভিন্নভাবে টার্গেট করতে চাইছে।
আহসান মনসুর আরও জানান, তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তার খুব কম সম্পর্ক রয়েছে।
এদিকে, এপিপিজির সদস্য রুপা হক একটি পৃথক ই-মেইল পেয়েছেন ‘প্যালাটাইন কমিউনিকেশনস’ নামে একটি ব্রিটিশ পাবলিক রিলেশন (পিআর) সংস্থা থেকে। ওই ই-মেইলেও ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের লিংক দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, যদি আহসান মনসুর ‘টিউলিপ সিদ্দিকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার’ জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে তিনি এবং তার পরিবারেরও তদন্তের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
রুপা হক বলেছেন, এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক যে, আমি এমন একটি ই-মেইল পেয়েছি। এটি আমাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে এক ধরনের প্রচেষ্টা।
ইউনূস সরকারের সংশ্লিষ্টতা ও তদন্ত
বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আহসান মনসুর। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত একটি চুক্তি নিয়ে তদন্ত করছে, যেখানে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ব্রিটিশ এমপি ফিল ব্রিকেল বলেন, এটি যদি আমাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রচারণা হয়, তাহলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি আরও বলেন, আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে কারা এই প্রচারণার পেছনে রয়েছে এবং কী উদ্দেশ্যে এটি চালানো হচ্ছে।
এপিপিজির কয়েকজন এমপি ই-মেইলগুলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শদাতাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র কমিটির নজরে এনেছেন। তারা এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার বিষয়ে তদন্ত করছে।
পিআর কোম্পানি ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
পিআর সংস্থা ‘প্যালাটাইন কমিউনিকেশনস’ দাবি করেছে, তারা নিজস্ব উদ্যোগে এসব ই-মেইল পাঠিয়েছে এবং এতে কোনো অসত্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
অন্যদিকে, ‘ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট’ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের প্রকৃত লেখক ‘নাম প্রকাশ করতে চাননি’, তবে তারা প্রকাশিত তথ্যকে ‘যথেষ্ট সঠিক’ বলে মনে করে।