
রাজধানীর মহাখালী এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন ওরফে টেলি সুমনকে (৩৩) খুনের টার্গেট করা হয় নিকেতন এলাকার একটি ক্লাব থেকে। হত্যার আগে ওই ক্লাবেই খুনিদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান সুমন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে পুলিশ প্লাজার সামনে এসে বসেন তিনি। সেখানে এসে প্রথমে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় খুনিরা। একপর্যায়ে সুমনকে লক্ষ করে গুলি করা শুরু করে।
কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় পাঁচজন। খুনিরা সুমনের পূর্ব পরিচিত ছিল বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ইন্টারনেট ব্যবসার চাঁদা নিয়ে দ্বন্দ্ব বলে মনে করছে পুলিশ ও স্বজনেরা। এর আগেও একাধিকবার সুমনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে সুমনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে মামলাটি করেন সুমনের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সুমনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সুমনের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন ইউনিয়নের সালাইপুরে। তার বাবার নাম মাহফুজুর রহমান। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় থাকতেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মারুফ আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আসামিদের গ্রেফতারে একাধিক টিম কাজ করছে। আজ-কালের (শুক্র-শনি) মধ্যে জানতে পারবেন।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে আগে থেকেই একটি পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল সুমনের। পুলিশ প্লাজার সামনে হত্যার আগে খুনিরা সুমনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। এর কিছুসময় আগে নিকেতনের একটি ক্লাবেও খুনিদের সঙ্গে সুমনের বাগবিতণ্ডা হয়। ক্লাবটি একটি রাজনৈতিক দলের নামে চলছে। নিহত সুমনের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও চুরির ছয় থেকে সাতটি মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মহাখালী এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করে আসছিলেন সুমন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি পক্ষ ব্যবসা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। এর জেরে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা।
সুমনের স্ত্রীর বড় ভাই বাদশা মিয়া বলেন, সেভেন স্টার গ্রুপের রুবেলের সঙ্গে তার ইন্টারনেট ও ডিস ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এর আগে রুবেল তার ব্যবসায়িক সাইট নিয়ে নেয়। পরে মীমাংসার পর সুমন ফের ব্যবসা পরিচালনা করছিল। এই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে রুবেল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাদশা মিয়া।
এ ঘটনায় নিহত সুমনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বনানী থানাধীন মহাখালী টিবি গেট এলাকায় প্রিয়জন নামক ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন সুমন ওরফে টেলি সুমন। ইন্টারনেট ব্যবসা করার কারণে একই এলাকায় তার কিছু সংখ্যক প্রতিপক্ষ গ্রুপ সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন সময় সুমনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। জীবন ঝুঁকিতে আছে বলে প্রায়ই স্ত্রী মৌসুমী আক্তারকে বলতেন সুমন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সুমন গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে ডাক্তার ফজলে রাব্বি পার্কের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে থাকা বেঞ্চে বসে বিশ্রামকালে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তখন তিনি নিজের জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে গুলশান শুটিং ক্লাবের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ প্লাজার সামনে পাকা রাস্তার ওপর রোড ডিভাইডারের কাছে পড়ে যান। গুলির শব্দে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে আসলে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পুলিশ প্লাজার পাশের রোড দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। সুমনের নিথর দেহ রাস্তার উপর পড়ে থাকলে স্থানীয় লোকজনসহ গুলশান থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে সুমনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ডিবির তদন্তে অগ্রগতি আছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মলিক। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঘটনা ঘটার পরপরই মাঠে নেমেছে ডিবি। আমরা মূল কিলারকে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুতই সফল হবো।