
পুঁজিবাজার » আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়ে প্রেষণে জরুরি ভিত্তিতে ১৯ কর্মকর্তা চেয়েছে কমিশন । » সমালোচনা করছেন অংশীজনেরা । হারাতে পারে আইওএসকোর সদস্যপদ ।
আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ মন্ত্রণালয় থেকে বিএসইসিতে কর্মকর্তা আনার সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করি না । এটি বাস্তবায়নে বিএসইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে ও নিজস্ব স্বকীয়তা হারাবে । কোনোভাবেই বিএসইসির মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন আনার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা যায় না । ' ফারুক আহমদ সিদ্দিকী বলেন ,
বিএসইসি একটি স্বতন্ত্র সংস্থা , যা নিজস্ব নিয়মকানুন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে । এর এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মতোই পৃথক একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা । সরকার বিএসইসি চেয়ারম্যান বা কমিশনারদের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রেষণে ( ডেপুটেশন ) নিয়োগ দিতে পারে না । সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলে বিএসইসির স্বাধীনতা প্রভাবিত হতে পারে , যদিও তাদের দক্ষতা ও ভূমিকা যা - ই হোক না কেন । প্রেষণে জনবল কেন চাওয়া ঘটনার সূত্রপাত ৫ মার্চ । ওই দিন সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে অনিয়মের অভিযোগে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারণে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা বিএসইসির চেয়ারম্যান- কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে রাখেন ।
মন্ত্রণালয় থেকে জনবল চেয়ে ভাবমূর্তির সংকটে
পরে সেনাবাহিনী তাঁদের উদ্ধার করে । পরদিন চেয়ারম্যান- কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তারা । এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের পক্ষে তাঁর গানম্যান আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন । যদিও তাঁরা সবাই জামিন পেয়ে কাজে ফিরেছেন । তবে এ ঘটনায় কর্মকর্তাদের ওপর রুষ্ট হয় বর্তমান কমিশন । সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে ( এফআইডি ) চিঠি দিয়ে প্রেষণে লোকবল চায় বিএসইসি । চিঠিতে কমিশনের কাজে গতি আনতে প্রেষণে জরুরি ভিত্তিতে ১৯ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে । এই ১৯ কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার , ৩ জন পরিচালক পদমর্যাদার , ১ জন কমিশন সচিব ও ১২ জন যুগ্ম বা অতিরিক্ত পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে । মন্ত্রণালয়ের লোকজন দিয়ে বিএসইসির কার্যক্রম পরিচালনার এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএসইসি স্বতন্ত্র মর্যাদা হারিয়ে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর সাবেক এক পরিচালক বলেন , ‘ বিএসইসিতে যা হচ্ছে , তা অনেকটা সার্কাসের মতো । এটাকে এখন আর রেগুলেটর মনে হয় না । এই কমিশনের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা শেয়ারবাজারের এমন কেউ নেই , যাঁরা জানেন না । এমন একটি নেতৃত্ব বিএসইসিকে পরাধীনের মতো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে । এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন হয় , তাহলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়ে পড়বে । এ ছাড়া স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে আইওএসকোর সদস্যপদ হারাতে পারে বিএসইসি । ’ এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং সংস্থার মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালামকে ফোন করা হলে কেউই ফোন রিসিভ করেননি । জানা গেছে , এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ( এডিবি ) সুপারিশে ১৯৯৩ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান পুঁজিবাজারের স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি প্রতিষ্ঠা করেন । তবে ওই সময় শুরুতে মন্ত্রণালয়ের লোকজন দিয়ে বিএসইসি পরিচালনা করা হতো । পরবর্তী সময়ে এডিবির সুপারিশে বিএসইসিতে নিজস্ব
কর্মকর্তা - কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয় । পরে ধীরে ধীরে মন্ত্রণালয়ের সবাইকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় । এর মধ্য দিয়ে বিএসইসি একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে । এই স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটিকে আবারও দুই যুগের বেশি সময় পরে এসে সেই মন্ত্রণালয়ের লোকজন দিয়ে পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন । স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ( ডিবিএ ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন , “ সারা বিশ্বে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষায়িত এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান । এখন আমাদের বিএসইসি যদি স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা হারাতে চায় , তাহলে বিএসইসিরই উচিত ব্যাখ্যা দেওয়া । সরকারেরও উচিত হবে এমন একটি কাজ করার আগে ভালোভাবে মূল্যায়ন করা । ’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন , মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভেতরে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে । কারণ , তাঁরা অন্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন ।