Image description

সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে অন্য চাকরিতে যোগদান; অব্যাহতির বিষয় গোপন করে দেড় বছর পর ফের উচ্চতর পদে ফেরা, বিদেশে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন ইত্যাদি অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তিনি ডা. ফাতেমা দোজা। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এই সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ নভেম্বর একটি বিভাগীয় মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে, এমনকি তিনি নিজেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অভিযোগনামায় লেখা হয়েছে, অভ্যাসগতভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের প্রবণতা রয়েছে তার। কিন্তু তারপরও মামলার অগ্রগতি নেই।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে আবেদন করেন ডা. ফাতেমা। আবেদনটি পরের দিন হৃদরোগ হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে অগ্রায়ণ করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করেন। এসব তথ্য গোপন করে ২০১৩ সালের ১১ জুন তিনি ফের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যোগদান করেন। চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার তারিখ থেকে পুনঃযোগদানের তারিখ পর্যন্ত তার কোনো ছুটি মঞ্জুর হয়নি।

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, ডা. ফাতেমা ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে উত্তর আমেরিকা রেডিওলজি সোসাইটির (আরএসএনএ) ১০৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশ নিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে আবেদন করেন। করোনাকালীন অপ্রয়োজনীয় বিদেশযাত্রায় অনুমোদন না থাকায় ব্যয়ভার আয়োজক সংস্থা বহন করবে উল্লেখ করে আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করেন। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করায় ডা. ফাতেমা দোজাকে দুটি পৃথক কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তবে তিনি কোনো জবাব দেননি। এ ছাড়া ডা. ফাতেমা ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত অবস্থায় ২০০৪ সালের ২ মে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। চার মাস এক দিন কারাভোগের পর ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান। ১১ সেপ্টেম্বর আবার কাজে যোগ দেন। ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার ও কারান্তরীণ হওয়ার তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করেন এবং পরে ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা বলে চার মাস আট দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে স্বাভাবিক নিয়মে বেতন-ভাতা ও পদোন্নতির সুযোগ নেন।

 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ডা. ফাতেমা দোজার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করে এবং মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

 
 

এসব অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডা. ফাতেমা দোজা লিখিতভাবে কমিটিকে জানান তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন।

 

তবে লিখিত জবাবে ডা. ফাতেমা দোজা স্বীকার করেন, তিনি ২০০৪ সালের ২ মে থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফৌজদারি মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে ছিলেন, সে তথ্য এড়িয়ে যান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা অধিশাখার ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর এক পত্রে ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির জন্য তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে রুজুকৃত ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার, কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত জেলহাজতে অন্তরীণ ছিলেন, মামলায় আদালত কী আদেশ দিয়েছিলেন তার বিশদ তথ্যাদি দশ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের পর চার মাস অতিবাহিত হলেও তিনি সেগুলো দেননি। ফলে থমকে আছে ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি।