Image description

ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এনডিটিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন -এমন শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম। এই কাতারে রয়েছে বিবিসি বাংলা, ডেইলি স্টার বাংলা, মানবজমিন, বাংলা ট্রিবিউন, যুগান্তর, যমুনা টিভি, কালেরকন্ঠসহ বেশ কিছু মূলধারার সংবাদমাধ্যম।

প্রথম আলো তাদের খবরের শিরোনাম “সংখ্যালঘু নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মূল জায়াগা” বলে শিরোনাম করলেও তাদের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ফটোকার্ডে লিখেছে “বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”। তবে ফটোকার্ডটি এখন আর তাদের ফেসবুক পেইজে নেই।

অন্যান্য সংবাদমাধ্যম কেবল তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে বাংলাদেশ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করলেও বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনের শুরুর অংশে (ইন্ট্রোতে) দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই প্রতিবেদনটি দিল্লী থেকে পাঠিয়েছেন প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষ।

 এখন প্রশ্ন হচ্ছে তুলসি গ্যাবার্ড কি আসলেই বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কোন মন্তব্য করেছেন?

এনডিটিভি ও এএনআই’র সাথে তুলসি গ্যাবার্ডের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। এনডিটিভির সাথে ৯ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের সাক্ষাৎকারের ৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে উপস্থাপক গ্যাবার্ডকে জিজ্ঞেস করেন, “ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমরা সেখানে ভয়াবহ সহিংসতা দেখেছি, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলারও অনেক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ওখানকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি উদ্বিগ্ন কিনা শুধু রাজনৈতিক নয় সব ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে?”

জবাবে তুলসি বলেন, অবশ্যই। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ, হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের কেন্দ্রে আছে এ বিষয়টি।”

বাংলাদেশ সরকারের সাথে এ বিষয়ে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে গ্যাবার্ড নিজ থেকেই বলেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা। এতে অবশ্যই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছাড়া অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষের ওপর প্রভাব পড়ে। তারা এটা সন্ত্রাস ও অন্যান্য সহিংস পন্থায় বাস্তবায়নের পথ বেছে নেয়।”

বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করা আর সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করা স্পষ্টতই দুই ধরণের বার্তা বহন করে। তবে এ বক্তব্যে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কোন কথাই বলেননি গ্যাবার্ড।

গ্যাবার্ড এর আগেও বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে কথা বলেছেন।

২০২১ সালের ২ এপ্রিল তার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা এক ভিডিও বিবৃতিতে তাকে বলতে শোনা যায়, “কংগ্রেসের একজন সদস্য হিসেবে আমি বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে রেজ্যুলেশন এনেছি। এই দমনপীড়ন ৫০ বছর আগে শুরু হয় যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনাী বাংলাদেশের লাখ লাখ হিন্দুকে ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে সিস্টেম্যাটিক্যালি খুন করে, ধর্ষণ করে এবং তাদের বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য করে। এটা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শুরু হয়।”

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তার পুরনো বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই শোনা গেল সাম্প্রতিক বক্তব্যে।

সূত্র: ফ্যাক্ট অর ফলস