Image description
 

তুলনামূলক সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ায় ট্রেনে যাত্রীর চাপ থাকে বেশি। ঈদের সময় সেই চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। যাত্রীর প্রত্যাশা মেটাতে প্রতিবছরই বাড়তি কিছু ব্যবস্থা নেয় রেলওয়ে। তবে গতানুগতিক এই ব্যবস্থা চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তাই প্রতিবছরের মতো এবারের ঈদেও ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফেরার আশায় থাকা মানুষদের বড় একটি অংশকে হতাশ হতে হবে।

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। কয়েকটি রুটে পাঁচ-ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর পাশাপাশি দূরপাল্লার নিয়মিত ট্রেনগুলোতে যুক্ত করা হবে অতিরিক্ত বগি। কিন্তু ট্রেনে যুক্ত করার মতো পর্যাপ্ত বগি (কোচ) নেই রেলে। তাই লক্কড়ঝক্কড় পুরোনো বগি মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে রেলওয়ের কারখানা মেরামত করা হচ্ছে ৯০টি কোচ। ইতোমধ্যে ৬০টিরও বেশি কোচ রেলওয়ের পরিবহন বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের আওতায় সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে মেরামত করা হচ্ছে ১২০টি কোচ। এর মধ্যে ৯০টি ব্রডগেজ ও ৩০টি মিটারগেজ কোচ। ইতোমধ্যে ৬৮টি কোচ রেলওয়ে পরিবহন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট কোচগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চলাচল উপযোগী করতে রাতদিন কাজ চলছে দুটি ওয়ার্কশপে। ২৫ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে এসব মেরামতের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দুটি ওয়ার্কশপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দূরপাল্লার প্রতিটি ট্রেনে দুই থেকে চারটি করে কোচ সংযুক্ত করা হবে।

 
 

রেলওয়ে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইঞ্জিন, কোচ ও লোকবল সংকটের কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রীর চাহিদা মেটানো যায় না। তবে কিছু ইঞ্জিন ও কোচ আমদানি হওয়ায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

 

পাহাড়তলী কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কোনো বগিতে চলছে ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের কাজ, কোনোটিতে হচ্ছে যন্ত্রাংশ পরিবর্তন কিংবা রঙের কাজ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই কারখানা থেকে আরও বেশি সুফল পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে তা পারা যাচ্ছে না। এই কারখানায় লোকবল রয়েছে প্রয়োজনের প্রায় ৪৪ শতাংশ। একই রকম অবস্থা সৈয়দপুরের কারখানায়ও।

 

পাহাড়তলী কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ আমীর উদ্দিন জানিয়েছেন, ঈদের জন্য ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকে পুরোনো কোচ মেরামতের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করতে কাজ চলছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মোস্তফা জাকির হাসান জানিয়েছেন, কারখানায় জনবল সংকট রয়েছে। সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে ১২০টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ কোচ রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

রেলে শুধু বগিই নয়, সংকট রয়েছে লোকোমোটিভেরও (ইঞ্জিন)। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে। এসব ইঞ্জিন বহরে যুক্ত হওয়ায় সংকট কিছুটা কমেছে। লোকোমাস্টার (চালক) সংকটের কারণেও ইঞ্জিনগুলো থেকে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া স্টেশন মাস্টার, সহকারী মাস্টার ও টিটিসহ ট্রেন পরিচালনায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ পদে লোকবলের অভাব রয়েছে। তাই এবারের ঈদেও বেশি কিছু করতে পারছে না রেলওয়ে। 

ঈদে নিয়মিত আন্তঃনগর ট্রেন আগের মতোই চলবে। তবে এসব ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ৫ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। এগুলো হলো– চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে চলবে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-১ ও চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল ট্রেন-২, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলবে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল-৩ ও দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেন-৪, ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার রুটে চলবে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন-৫ ও শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন-৬, ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে চলবে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন-৭ ও শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন-৮, জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে চলবে পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল ট্রেন-৯ ও পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল ট্রেন-১০। ১৪ মার্চ থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঈদের পরের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৩ এপ্রিল। অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে এসব টিকিট।