
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রবাহিনীর মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত অবস্থায় নিহত এরশাদ আলীর নাম লন্ডনের ‘টাওয়ার হিল মেমোরিয়ালে’ লেখা রয়েছে। তবে ‘ক্ষোভে ও হতাশায়’ স্মারক স্তম্ভ থেকে সেই নাম এখন মুছে ফেলতে চায় এই যোদ্ধার পরিবার। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিশ্বযুদ্ধের যোদ্ধা এরশাদ আলীর ছেলে আতাউর রহমান।
৮৬ বছর বয়সী আতাউর রহমান থাকেন বাংলাদেশের সিলেটে। তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিহত স্বজনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিস্তম্ভটি পরিদর্শন করার আশা করছিলেন। পরিবারের দাবি, যুক্তরাজ্য সরকার তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করে গত ডিসেম্বরে একটি প্রত্যাখ্যানপত্র জারি করেছে। এতে তারা ‘অসম্মানিত ও বৈষম্যের শিকার‘ বোধ করছেন।
স্বীকৃতি পেলেও পরিবারের সদস্যদের একনজর স্মৃতিস্তম্ভটি দেখার সুযোগ করে দিতে ভিসা দেয়নি যুক্তরাজ্য। বৃদ্ধ আতাউর রহমান বলেন, ‘আমার মনে হয়, ভিসা অফিসার ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। যা আমি অমানবিক বলে মনে করি। আমার মনে হয়, তারা কেবল আমার বাবাকেই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সব নাবিককে অপমান করেছে।’
১৯৪৪ সালের ১৯ জুন ডাচ পণ্যবাহী জাহাজ এসএস গ্যারোয়েট একটি জার্মান ইউ-বোটের আঘাতে ডুবে গেলে এরশাদ আলী মারা যান। তার সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তর পাঁচটি পদক দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এরশাদ আলীর পাওয়া পদকগুলো হলো, ‘বার্মা স্টার’, ‘আটলান্টিক স্টার’, ‘১৯৩৯-৪৫ স্টার’, ‘১৯৩৯-৪৫ ওয়ার মেডেল’ এবং ‘ডাচ মোবিলাইজেশন ওয়ার ক্রস’।
আতাউর রহমান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতর আমার প্রয়াত বাবা এবং আমাদের নাবিক পরিবারকে অপমান করেছে। আমরা অপমানিত এবং লজ্জিত বোধ করছি। আমি ৮৬ বছর বয়সে আমার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি এবং আমার শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগে আমার বাবার স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করা। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্মকাণ্ডের কারণে এটি আর সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু আমাদের সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাই আমার বাবার নাম স্মৃতিসৌধে থাকার কোনও কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, স্মৃতিস্তম্ভ থেকে এবং কমনওয়েলথ যুদ্ধের রেকর্ডসহ সব সরকারি নথি থেকে তার নাম স্থায়ীভাবে মুছে ফেলা হোক।’
এরশাদ আলীর নাতি সুহেল রানা বলেন, ‘আমরা অসম্মানিত এবং বৈষম্যের শিকার মনে করছি। আমরা দাদুর পদকগুলো যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ফেরত পাঠাতে চাই এবং সমস্ত স্মৃতিস্তম্ভ থেকে তার নাম চিহ্ন মুছে ফেলতে চাই।’
এরশাদ আলীর পরিবারের সদস্যদের ভিসার জন্য কয়েকটি আমন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করছেন ‘মেডেলস লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ এর পরিচালক স্টিভ বেলগ্রোভ। তবে তাদের কোনও প্রচেষ্টাই সফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি এরশাদ আলীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তারা কেবল তাদের প্রয়াত স্বজনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চায়। তবে ভিসা না পেয়ে তারা খুবই লজ্জিত এবং অসম্মানিত বোধ করছে। তারা পদকগুলো যুক্তরাজ্যে ফেরত পাঠানোর এবং স্মারক থেকে তার নাম মুছে ফেলার কথা বলছে।’
সুহেল রানা এরই মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শনও করেছে। কিন্তু সে নিজের দাদুর স্মৃতিবিজড়িত স্তম্ভটিতেই সে যেতে পারছে না উল্লেখ করে স্টিভ বেলগ্রোভ বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা জঘন্য। যদি পরিবারগুলো শ্রদ্ধা জানাতেও যেতে না পারে, তাহলে কেন কারও নাম স্মৃতিস্তম্ভে লেখা হবে? এটা লজ্জাজনক। এই লোকেরা আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমার মনে হয়, যুক্তরাজ্য সরকার কমনওয়েলথকে হতাশ করছে।’