Image description
 

কোনোপ্রকার পূর্ব-ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশিদের জন‌্য ওমরাহ ভিসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি সরকার। বাংলাদেশ থেকে রমজান মাসে অনেক মুসল্লি ওমরাহ করতে যান। সেই অনুযায়ী এবারও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন অনেকে, এজেন্সিগুলো তাদের জন্য টিকিটও বুকিং দিয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ ভিসা বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ওমরাহ যাত্রী ও এজেন্সিগুলো।

ভিসা বন্ধ হলেও আগেভাগে বুকিং দেওয়া বিমান টিকিটের মূল্য ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে টিকিট-মূল্য সবাই ফেরত পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধে উদ্বেগ জানিয়ে সংকট নিরসনে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জটিলতা কাটিয়ে বিষয়টি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

এছাড়াও বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা এজেন্সিগুলোর অগ্রিম ভাড়ার অর্থ ফেরত দেবে বলে নিশ্চিত করেছে বলেও জানিয়েছেন আ ফ ম খালিদ হোসেন।

ইউএনবিকে দেও‍য়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সৌদি সরকার নুসুক অ‌্যাপের মাধ‌্যমে ওমরাহ ভিসা ওপেন করে (খুলে) দিয়েছিল, অথচ (কাজের উদ্দেশ্যে) লাখ লাখ মানুষ এখন সৌদি আরবে হাজির। হজের চেয়েও বেশি মানুষ এখন মক্কা-মদিনায়। মানুষ যে এবাদত করবে সেই পরিবেশ নেই। এই পরিস্থিতিতে সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা ইস্যু প্রায় বাতিল করে দিয়েছে। (বাংলাদেশিদের জন্য) তারা এখন ভিসা ইস্যুর হার ১০%-এ নামিয়ে এনেছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ওমরাহ ভিসা ইস্যু করা কমিয়ে দেওয়ার কারণে আমরা উদ্বিগ্ন, সেই উদ্বেগ আমরা তাদের জানিয়েছি। ভিসা আগের মতো ওপেন করার অনুরোধও করেছি। আমরা শনিবার সৌদি রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের এখনও কোনো উত্তর দেয়নি।’’

আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘‘চিঠিতে আমরা বলেছি, আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমাদের ওমরাহ যাত্রীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা এজেন্সিগুলোকে টাকা দিয়েছেন, এজেন্সিগুলো বিমানের টিকিটও বুকিং দিয়ে দিয়েছে। এখন এজেন্সিগুলোকে টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সৌদি সরকারকে বাংলাদেশের জন‌্য ওমরাহ ভিসা ইস্যু স্বাভাবিক করার অনুরোধ করেছি। আমি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ফোনেও কথাও বলব। দেখি তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়! বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে নিয়ম আছে, বুকিং দিলে পরে টাকা ফিরিয়ে নিলে একটা ফি কাটে। সামান‌্য একটা ফি কেটে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এ বিষয়ে তারা রাজি হয়েছে।”

শুধু বাংলাদেশিদের জন‍্যই কি এ সমস্যা হয়েছে- জানতে চাইলেন তিনি বলেন, ‘‘আমি যতটুকু শুনেছি, ওমরাহ ভিসা বন্ধ শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয়। এ বিষয়ে আমরা অফিশিয়াল কোনো কারণ এখনও জানতে পারিনি। তবে শুনেছি, রমজানে বেশি লোকের চাপ, একসঙ্গে এত লোকের চাপ সামলাতে একটু সমস্যা হচ্ছে, তাই হয়তো সাময়িক সময়ের জন‍্য সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা বন্ধ করেছে। সৌদি সরকার ঘোষণা দিয়ে ভিসা ইস্যু বন্ধ করলে এজেন্সিগুলো ওমরাহ যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিতেন না; কিন্তু তারা হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করছি, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।”

এদিকে, এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আজকে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিষয়টির সমাধান কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসা ইস্যু এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে একটি অনুরোধপত্র সৌদি রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। দেখি কী সিদ্ধান্ত আসে!”

তিনি বলেন, ‘‘যারা অগ্রিম টাকা জমা দিয়েছেন, তারা যেন দ্রুত টাকা (ফেরত) পায়, সে বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা থাকবে। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে; টিকিটের অগ্রিম টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’’

ধর্ম মন্ত্রণালয় সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক ইউএনবিকে বলেন, ‘‘হজের মতো ওমরাহ নিয়ে আমাদের দুদেশের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ কোনোকিছু নেই। তারপরও আমরা সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। যারা ওমরাহয় যাওয়ার উদ্দেশ্যে টিকিটের জন‍্য বিভিন্ন এজেন্সিতে টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে ব‍্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ওমরাহ যাত্রী পরিবহন করে থাকে ১০-১২টি এয়ারলাইন্স। রমজানে প্রতিদিন ১,০০০-১,২০০ ওমরাহ যাত্রী পরিবহন করার কথা। তবে ভিসা বন্ধ করায় যাত্রীরা এখন যেতে পারছেন না। অবশ্য এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ওমরাহ যাত্রীদের (সৌদি) যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।