Image description
রাজধানীর এসব কলেজের মধ্যে পাঁচটিতে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু রয়েছে।

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র যে বিশ্ববিদ্যালয় করার কাজ চলছে সেটির প্রস্তাবিত কাঠামোতে এসব কলেজের যেগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক আছে সেগুলো বহাল রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সেভাবেই সাত কলেজকে আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিয়ে রূপরেখা তৈরি করছে।

রোববার বিকালে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কলেজগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় আছে সেগুলোতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থাকবে। কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে টাইম ও স্পেস শেয়ার করবে। সেভাবে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।”

এর আগে এদিন সকালে ইউজিসিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক সভায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ বা ডিসিইউ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকের পর ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটিও প্রস্তাবিত। পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রস্তুত করা হলে সেটিতে এ নাম অন্তর্ভুক্ত হবে।”

রাজধানীর সরকারি এই সাত কলেজ হল- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।

এগুলোর মধ্যে ঢাকা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, কবি নজরুল ও সরকারি বাঙলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু রয়েছে।

অধ্যাপক তানজীম বলেন, স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তরের আগে কলেজগুলোর বিষয়ে একটি অন্তর্বতীকালীন কাঠামো সুপারিশ করা হয়েছে। এভাবেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

কলেজগুলো কীভাবে চলবে সেটির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর মধ্যেই কলেজগুলোর কার্যক্রম চলবে। শ্রেণিকক্ষ ও সময় ভাগাভাগি করে বিদ্যমান ক্যাম্পাসেই উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাশ ও পরীক্ষা চলবে।

আগের মতই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কলেজগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা হওয়ার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবেই রূপরেখা করার কাজ চলছে।

সরকারি সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে গত ২৯ ডিসেম্বর চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।

আগামী এপ্রিলের মধ্যে রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময় থাকার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক তানজীম বলেন, “এ সময়ের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে, আমরা রূপরেখা প্রণয়নের কাজ অনেক দূর করে ফেলেছি।”

 

 

 

কবে থেকে সাত কলেজ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর অধীনে যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেজন্য সময় লাগবে। কারণ আমাদের রূপরেখাটি আইন আকারে সংসদ ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়ে আসতে হবে।

“তবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় এটি অধ্যাদেশের মাধ্যমেও আইন হিসেবে রূপ পাওয়া সম্ভব।” যদিও প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর অধীনে সাত কলেজ যেতে কত সময় লাগবে সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে মন্তব্য করতে চাননি ইউজিসির এই সদস্য। তিনি বলেন, “আমরা রূপরেখাটি প্রস্তুত করে শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে বসব। তার সামনে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সুপারিশ অনুসারে, সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে; আর পুরো কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করবেন ইউজিসির একজন সদস্য।

মঞ্জুরি কমিশনের এই প্রস্তাব আমলে নিয়ে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে গত ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি সংক্রান্ত দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাময়িক একটি কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

একটি সনদপ্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতাভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো সাতটি কলেজের দায়িত্ব পালন করবে।

ইউজিসি যে কাঠামোর প্রস্তাব করেছে সে অনুযায়ী, ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সাত কলেজের নজরদারি সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। এর পরিচালক হবেন সাত কলেজের মধ্য থেকে নজরদারি সংস্থা মনোনীত একজন ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ’ অধ্যক্ষ।

প্রস্তাবিত কাঠামোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক নির্দেশনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তা সাত কলেজের শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহায়তা করবেন।

একইভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবাতীয় কাজে ওই কাঠামোকে সহায়তা করবেন। অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধি বা কর্মকর্তারা অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজে সহায়তা দেবেন। সাত কলেজে অনলাইনে ভর্তির জন্য একটি কমিটি থাকবে।

এক সময় দেশের সব ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।

২০১৪ সালের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর ধারাবাহিতায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়।

ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাত সরকারি কলেজকে অধিভুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ করার কথা জানানো হয় গত ২৭ জানুয়ারি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। তবে রোববার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি’ নামটি চূড়ান্ত হল।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া ‘আরেক ধাপ এগিয়েছে’।

“ইউজিসি সাত কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ হিসেবে চূড়ান্ত করেছে। ইউজিসি ইমেইলে মতামত নিয়েছেন। সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২৮টি টিম করা হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে মতামত দিয়েছে। ২৮ জন টিম লিডারদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হয়েছে নতুন নাম।”

বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সাতটা কলেজের প্রশাসনিক কাজ কীভাবে চলবে সেটা চূড়ান্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। ঢাবি সিন্ডিকেট অনুমোদন করলে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কার্যকর হয়ে যাবে।”

প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অচিরেই বিষয়টি নিয়ে বসবেন জানিয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। সাতটা কলেজের অধ্যক্ষদের কোনো একজনকে মনোনীত করা হবে প্রশাসক হিসেবে।

“ইতোমধ্যে ইউজিসি সাতজন অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই কলেজেই হবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের প্রশাসনিক ভবন বা হেড কোয়ার্টার্স। সাতটা কলেজের মধ্যে কো অর্ডিনেশন ডেস্ক তৈরি করা হবে। সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষরা থাকবেন কো অর্ডিনেশনের দায়িত্বে।”