
দীর্ঘ ১৫ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন। দিল্লির নাচের পুতুল শেখ হাসিনার শাসনামলে ৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণ থেকে রেহাই পায়নি। ওই সব ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে নানা সেক্টর থেকে আন্দোলন হয়েছে। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে গণঅবস্থান মানববন্ধন, অবরোধ, পথযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু এনজিও নেত্রীরা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। কারণ তারা দিল্লির দালালিতে অভ্যস্ত। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষতি হয় তেমন কাজ করা থেকে তারা বিরত থাকতেন। এখন হঠাৎ করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন এনজিও নেত্রীরা। ধর্ষণের বিরুদ্ধে দেশের আপামর জনগণ। কিন্তু এই এনজিওগুলোর নেত্রীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে কয়েকটি এনজিও। সে সময় নেত্রীরা বলেছেন, দেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই সংকট শুধু ভুক্তভোগীর জীবন নয়, সমাজের মূল ভিত্তিকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন বলতে নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণসহ সব ধরনের নির্যাতনই রয়েছে। তাই আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়। ‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বক্তারা। শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, মাগুরার শিশুটিসহ ৬ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ২৫টি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা এই সহিংসতা জাতিকে হতবাক করেছে এবং সারা দেশে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদে একাত্মতা ঘোষণা করে আজ আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে ধর্ষণের ভয়াবহতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণ বলার আহ্বান জানান বক্তারা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সমন্বয়ক তামান্না হক (রীতি) সংগঠনের সংকলিত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০২৪ সালে ৩৬ জন এবং এ বছরের প্রথম দুই মাসে ৪ জন ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় নৃশংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এর মানে হচ্ছে ধর্ষণ-নির্যাতন প্রতিরোধে যা ব্যবস্থা আছে, তাতে ঘাটতি রয়েছে। অভিযোগের তদন্ত, বিচারপ্রক্রিয়া, সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা ইত্যাদি যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা মোকাবিলায় নিয়মিত কাজ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটো শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নিপীড়ন’ বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’
ডিএমপি কমিশনার এমন মন্তব্যে মানুষ তীব্র প্রতিবাদ করছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতে স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার দাবি উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। সবাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন। কিন্তু এনজিওগুলোর ধর্ষণ প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। কারণ হাসিনা রেজিমে শত শত ধর্ষণের ঘটনার পরও এই এনজিওগুলোকে ঐকবদ্ধ্যভাবে প্রতিবাদ করতে দেয়া যায়নি।