Image description

Muhammad Miraj Mia (মুহাম্মদ মিরাজ মিয়া)

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে গোলটেবিল বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের দুইটা গুরুত্বপূর্ণ কথা লক্ষ্য করেছেন? গুতেরেস বলেছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমৃদ্ধি বিকাশের যে স্বপ্ন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সঞ্চার হয়েছে জাতিসংঘ সেটাকে স্বীকৃতি জানায়। আরও বলেছন যে, এই সময়টা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি অংশগ্রহণমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নির্মাণের এই পথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও উচিত বাংলাদেশের পক্ষে তাদের প্রত্যাশিত ভূমিকাটি পালন করা।

ইউএন মহাসচিব একবারও নির্বাচনের তাগাদা দেন নাই, বলেছেন সংস্কার হতে হবে, সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে। গুতেরেসের এই দুই বক্তব্য শুনেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে ফখরুল ও সালাহউদ্দিন সাহেব যা বলেছেন এবং তাদের যে বডি ল্যাংগুয়েজ, তাতে বোঝা যায় তারা খুবই হতাশ হয়েছেন। ফখরুল ইসলাম তো বলেই ফেলেছন, গুতেরেসের সাথে কেন বৈঠক আমি তা ঠিক বুঝিনি। স্বল্প সংস্কারে নামে এই ডিসেম্বরেই ইউনূসকে বিদায়ের যে নির্বাচন আন্দোলন বিএনপি শুরু করলো সেটা গুতেরেসের এই স্টেটমেন্টের পর একটা বড় ধাক্কা খেলো। এমনকি আজকের গোলটেবিল বৈঠকটা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে হলেও, সেখানে ঐকমত্য কমিশনের মেম্বাররাও উপস্থিত ছিল। মিটিংটার আয়োজক কিন্তু ইউনূস না, বরং এই মিটিং আয়োজন করেছে জাতিসংঘ নিজেই।

খুবই সিগনিফিক্যান্ট ঘটনা কিন্তু। পাঁচই আগস্টের পর এই প্রথম বাংলাদেশের পলিটিক্স রাইট ট্র্যাকে আসলো। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন আন্দোলন এখন ব্যাকফুটে। বলকার তুর্কের নেতৃত্বে কদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যে রিপোর্টটা দিলো, সেখানেও অপরাধীদের বিচার ও যথাযথ সংস্কারের কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আমাদের আর পেছনে ফেরার সুযোগ নাই।একুশ শতকের তৃতীয় দশকে এসে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিয়ে পুনরায় নব্বইয়ে ফিরে যাওয়ার অপশনও নাই। গুতেরেসের এই সফরের মাধ্যমে ইউনূসের ইমেইজ এখন দেশে-বিদেশে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। এখন শুধু দরকার আমাদের যথাযথ সাপোর্ট। এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের চেয়ে আপনার আমার সকলের মতামত গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার।

এখন ইউনূসকে এটা বুঝাতে হবে যে, আপনি এবার রাজনৈতিক দলগুলোর বাবল থেকে বের হয়ে শহীদের লাশ বহন করা ঐ রিকশাওয়ালার কাছে যান। নিজের কানে শুনেন তিনি খুনীদের বিচার চান কিনা। স্যার, আপনি মোহাম্মদপুরের ঐ মা-খালাদের কাছে যান, যারা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পানি ও খাবার বিতরণ করছিল। শুনেন যে, তারা সংস্কার ব্যতিত নির্বাচন চায় নাকি আপনাকে আরও সময় দিতে চায়। স্যার, আপনি হাসপাতালে গিয়ে আহত হওয়া, পঙ্গু হওয়া ভাই-বোনদের কাছে আবার একটু যান।

গিয়ে দেখুন তারাও আপনাকে ডিসেম্বরে বিদায় করে দিতে চায় কিনা। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আপনার এতো অসহায় হওয়ার দরকার নেই। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, দেশের জনগণ সবাই যখন আপনাকে আরও কিছুদিন সময় দিতে চায়, আপনাকে আর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মাথা নত করারও কোন কারণ দেখছি না। আমরা আছি স্যার। বাংলাদেশকে আপনি আপনার আপন যোগ্যতায় এগিয়ে নিয়ে যান। আপনাকে শক্ত করে ধরে রাখার মতো যোগ্যাতা আমাদের নাই বলে আপনি থেমে যাবেন না। আপনাকে যে এই হতভাগা জাতিকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যেতেই হবে স্যার!