
দেশের ফুটবলে বহুল প্রতিক্ষার অবসান ঘটছে আজ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মতো বড় আসরে খেলা কোনো প্রবাসী ফুটবলার আসছেন দেশে। ইংলিশ লিগ শেফিল্ডে ধারে খেলা লেস্টার সিটির ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী আসছেন আজ, যা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এরই মধ্যে রওনা দিয়েছে হামজাকে বহনকারী বিমান। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ম্যানচেস্টার থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করবে।
হামজার আগমনের খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে)। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাফুফের পেজ থেকে বিমানে বসে থাকা হামজার একটি ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে আসছেন। ‘বেঙ্গল টাইগার’ তার ঘরের পথে। আরও জানতে সাথেই থাকুন।’
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রবাসী এই ফুটবলারকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে দুই দিন আগেই সিলেট পৌঁছেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সদস্যরা। রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। বিমানবন্দরে হামজা প্রবেশের পর সেখান থেকে তাকে সঙ্গে করে গাড়ির বহর যাবে বাবার বাড়ি হবিগঞ্জে। দুই দিন পূর্বপুরুষের বাড়িতে কাটাবেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী।
বাংলাদেশে বহুবার এসেছেন হামজা চৌধুরী। শিশু বয়স থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত এসেছেন ছোট্ট হামজা। ১৯৯৭ সালে জন্ম হামজার। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে আসা শুরু হয়। প্রতি বছরই নাকি বাহুবলের স্নানঘাট গ্রামে এসেছেন। হামজা শেষবার হবিগঞ্জের স্নানঘাটে আসেন ২০১৪ সালে। তবে এবার তার আগমনটা বিশেষ। এবার বাংলাদেশে আসা হচ্ছে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলবেন বলে। এ নিয়ে শিহরিত হামজার পরিবারও। বাবা মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী আগেই চলে এসেছেন হবিগঞ্জে। হামজা আসা উপলক্ষে হবিগঞ্জে তাদের বাড়িতে পড়ছে রঙের শেষ আঁচড়। কারণ মা, স্ত্রী, দুই ভাই ও সন্তানসহ ৯ সফরসঙ্গী নিয়ে ঢাকা আসছেন প্রবাসী এই ফুটবলার। হামজার ইচ্ছা, বাংলাদেশের জার্সিতে তার অভিষেক ম্যাচটা যেন পরিবারের সবাই মাঠে বসে দেখতে পারেন। ২৫ মার্চ শিলংয়ের জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেখানে হামজার সফরসঙ্গী হতে পারেন পরিবার ও নিকট আত্মীয়সহ ১৬ থেকে ১৭ জন।
ইংলিশ ফুটবলে বেড়ে ওঠা এই তারকার আগমনে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ বাফুফে। জানা গেছে, সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে হামজার জন্য আলাদা সংবর্ধনার আয়োজন না করলেও, সিলেটে অবতরণ থেকে শুরু করে ঢাকায় আসা এবং ভারতে যাত্রা পর্যন্ত তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে বাফুফে। সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম বলেন, ‘হামজা ১৭ মার্চ সিলেট পৌঁছানোর পর বাফুফের কয়েকজন নির্বাহী সদস্য তাকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি হবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হবেন, যেখানে তার যাতায়াতের জন্য বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক একজন অফিসিয়ালও দায়িত্ব পালন করবেন।’ হামজাকে বরণ করতে ঢাকা থেকে সিলেটে দুই দিন আগেই হাজির হন বাফুফের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহিন, সাবেক ফুটবলার ইকবাল হোসেন ও গোলাম গাউস, হামিদুর রহমান সবুজ কামরুল হাসান হিলটন।
হবিগঞ্জে দুই দিন থেকে ১৯ মার্চ দুপুরে ঢাকায় টিম হোটেলে যোগ দেবেন হামজা। ওই দিন দুপুরে অফিশিয়াল প্রেস কনফারেন্সে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন তিনি। তার আগে সকালে দলীয় ফটোসেশন হবে। এরপর বিকাল বা সন্ধ্যায় অনুশীলনে নামার কথাও রয়েছে হামজার। দলের অনুশীলনের ব্যাপারটি অবশ্য নির্ভর করছে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ওপর। এ বিষয়ে ফাহাদ করিম বলেন, ‘আমরা তো চাই হামজা এখানে (ঢাকায়) একদিন অনুশীলন করুক। এখন ক্যাম্প চলাকালীন সব সিদ্ধান্ত তো কোচের। অনুশীলন হবে, নাকি জিম সেশন হবে, সেটা কোচ নির্ধারণ করবেন।’
হামজা একজন ক্যারিবিয়ানের সন্তান। মা রাফিয়া চৌধুরীর বিয়ে হয়েছিল একজন ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে। কিন্তু সেখানে তার আর সংসার করা হয়নি। পরে দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে হামজার মায়ের বিয়ে হয়। মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী মিডিয়াকে বলেন, ‘হ্যাঁ এটা সত্য। বায়োলজিক্যালি আমার সন্তান না। হামজার বাবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। আমি যখন বিয়ে করি তখন হামজার এক বছর বয়স।’ এক বছর বয়স থেকে পিতৃস্নেহে বড় করেছেন হামজাকে। নতুন বাবার বংশ পরিচয়ে হামজা দেওয়ান চৌধুরী নামে তার নাম রেজিস্ট্রেশন করা হয়। নতুন নামে বেড়ে উঠেছেন তিনি। হামজা ছাড়াও দেওয়ান মোরশেদের ঘরে আরও তিন সন্তান রয়েছে। দেওয়ান মোরশেদ বলেন, ‘আমার তিন ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে হামজা, মেয়ে তাসনিম এবং পরে আরও দুই ছেলে মেহেদী ও মাহী।’ মুসলিম ধর্ম ভালো লেগেছে হামজার। মোরশেদ চৌধুরী ধর্মভীরু মানুষ। তার কাছ থেকেই ভালোমন্দ দেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন হামজা চৌধুরী।