Image description

Shafin Rahman (শাফিন রহমান)

 
বর্তমানে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে সফর করছেন। সফরকালিন সময়ে তিনি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে এসবের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজারে রোহিংগা ক্যাম্প পরিদর্শন।
 
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিতে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস উপস্থিত রোহিংগাদের উদ্দেশ্যে একটি মূল্যবান কথা বলেন। সেটি হলো “এবারের ঈদটা হয়ত আপনারা নিজেদের ভূমিতে করতে পারছেন না, কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি আগামী ঈদ আপনারা নিজের বাড়িতে/ভূমিতে করতে পারবেন”
 
দ্যাটস ভেরি সিগনিফিকেন্ট
 
জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিতে এই কথা বলা মানে রোহিংগাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দিতে জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে; আর জাতিসংঘ কাজ করছে মানে অফিসিয়ালি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীন সিগন্যাল আছে।
 
আপনাদের কি মনে পড়ে, আজ থেকে ৩/৪ বছর আগে একজন ইউএস কংগ্রেসম্যান ‛বাংলাদেশের আরাকান দখল করে নেওয়া উচিত’― টাইপ একটি প্রস্তাবনা পেশ করেছিল? যারা রিকল করতে পেরেছেন তারা নিশ্চয়ই জানবেন ওই প্রস্তাবনাকে সেসময় বেশ গুরুত্বের সহিত'ই দেখা হয়। তবে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার বিষয়টিকে নেগলেট করে বা কোনো রেসপন্সই করেনি। কিন্তু তাতে করে প্রস্তাবনাটি কিন্তু Dead হয়ে যায়নি। কারন এ ধরনের সেন্সিটিভ ইস্যু গুলি ইনস্ট্যান্ট না হলেও পাঁচ/দশ বছর পরে গিয়েও ফাংশন করা শুরু করে। যার প্রমান আমরা এই মুহূর্তে চিফ এডভাইজার থেকে ইতোমধ্যেই পেয়েছি।
কিন্তু প্রশ্ন, আরাকানে রোহিংগাদের ফেরত পাঠানো কি সহজ হবে.?
 
মোটেই না। ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট।
 
আরাকানের ৯০ শতাংশ ভুমি এখন আরাকান আর্মির দখলে। এছাড়া সেখানকার কিছু অংশ আরসা, আরএসও সহ বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রূপের হাতেও রয়েছে। তবে রোহিংগাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা আরাকান আর্মি।
 
আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান জানিয়েছেন “বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে”। তবে ঠিক কি ধরনের যোগযোগ করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।
 
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় আরকান আর্মির সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির তেমন মতানৈক্য লক্ষ্যনীয় ছিল না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে আরাকান আর্মির প্রতি একপ্রকার মৌন সমর্থনই ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু গত পাঁচ আগস্টের পরই আরাকান আর্মি হান্ড্রেড এইটটি ডিগ্রিতে পল্টি নিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের বিভিন্ন এলাকা দখল নিয়ে বাংলাদেশের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে। এছাড়া আরাকান আর্মি প্রধান ভারত সফরের পর ঘোষণা দেয় যে তারা ভারতের কালাদান প্রজেক্টের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে না, বরং তাদেরকে সহায়তাই করবে। এর থেকে বোধগম্য হয় যে, পাঁচ আগস্ট পরবর্তী অনেকটা লম্বা সময় ধরেই আরাকান আর্মি ভারতের ইশারায় চলার চেষ্টা করেছিল।
 
কিন্তু বিগত ২০ জানুয়ারী ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার কিছুদিন পর থেকেই আরাকান আর্মির এক্টিভিটি আবারও পরিবর্তন হয়ে যায়। যেহেতু তাদের মাঝে বিভিন্ন গ্রূপিং আছে, তাই বিষয়টি খুব সহজেই অনুমেয়।
আমরা সবাই জানি, এবারের টার্মে ট্রাম্পের ধ্যানজ্ঞান একটাই “America First” অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্তে আমেরিকা তার Decisiveness শো করবে।
 
বিগত বেশ কয়েক বছরে মিয়ানমারে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান, চাইনিজ কোম্পানি বেশ ভাল আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছে। এমনকি চাইনিজরা স্বল্প পরিসরে নিউক্লিয়ার বোমের মজুত'ও করেছে মিয়ানমারে; যা কিছুদিন আগে দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকাতে প্রকাশ হয়। এময়বস্থায় মিয়ানমারে চীনকে চাপে রাখতে হলে অবশ্যই মেজর ব্রেকথ্রু দিতে হবে, নাহলে এই বড় বড় চাইনিজ টেকেনিলজিক্যাল হাব থেকে মিয়ানমারের বাসিন্দাদের কোনোভাবেই ফিরিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। ইতিমধ্যেই তারা চীনকে ঔন করা শুরু করেছে, যদিও রাখাইনে আরাকান আর্মির কথা আলাদা কারন তারা কিছুদিন আগেই একটি চাইনিজ প্রজেক্টে এটাক করেছিল।
তো যা বলছিলাম...
 
এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় কার্ড হলো রোহিংগাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা। রোহিংগারা যখনই নিজ আবাস ভূমিতে ফেরত যাবে, ইনস্ট্যান্ট জাতিসংঘ ‛আরাকান মিশন’ নামে একটা ইভেন্ট খুলে ফেলবে এবং ঐ মিশনের আন্ডারে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী রাখাইনে ডিপলয়েড হবে এবং তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকবে।
 
এটা প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে তারা তাদের গ্রেট প্ল্যান ইমপ্লিমেন্ট করবে।
 
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কিছুদিন আগে আমি একটি প্রজেক্টের কথা বলেছিলাম “Global Map Transformation”
 
চলতি বছর থেকে প্রজেক্টের ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা, যার মূল উদ্দেশ্য এই সাবকন্টিনেন্টে র্যাডক্লিফের মানচিত্রে পরিবর্তন আনা এবং ভেরি আনফরচুনেটলি মানচিত্র প্লাস মাইনাসের ইমপ্লিমেন্টেশন শুরু হলো আমাদের হাত ধরে।
 
এখন প্লাস মাইনসের এই খেলায় যথাসম্ভব কাইনেটিক পাওয়ার বাইপাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উপরন্তু বার্গেনিং, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমেই যেন পুরো বিষয়টি সম্পন্ন হয় সেদিকেই নজর সবার।
 
আর এই বার্গেনিং, নেগোসিয়েশনের উদ্দেশ্যেই মূলত প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর।
 
বাংলাদেশের স্বার্থের পাশাপাশি সেখানে গ্রেট প্ল্যানের ব্যাপারেও বার্গেনিং হবে। বাংলাদেশ ডেলিগেশন সেখানে জাস্ট পরাশক্তির রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে অংশগ্রহন করবে।
 
রোহিংগারা আগামী বছরের ঈদের মাঝেই নিজ ভূমিতে ফিরে যাচ্ছে তা ৫০ শতাংশ নিশচিত, বাকি ৫০ শতাংশ নির্ভর করছে চীন কি ধরনের আবদার করে, তাদের দাবিদাওয়া কেমন, তারা ভূমির আধিপত্য চাইবে নাকি বাণিজ্যের আধিপত্য― ইত্যাদি বিষয়াদির উপর। তবে চীনকে যেকোনো একটি নিয়েই খুশি থাকতে হবে, হয় ভূমি নয় বাণিজ্য। দুটো একসাথে চলবে না। যদি কোনো কারণে চীন যদি বাঁধ সাধে, সেক্ষেত্রে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আপনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আরাকানে মিলিটারি ইন্টারভেনশনে এনগেজ হতে দেখার সুযোগ পাবেন, তবুও যেকোনো মূল্যে রোহিংগারা ফেরত যাবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারন এটাই গ্রেট প্ল্যান।
কিন্তু মানচিত্র প্লাস মাইনাসের এই ভয়ঙ্কর খেলায় বাংলাদেশকে কিছুটা হারাতে হবে, এ ব্যাপারে আপনারা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন। তবে বাংলাদেশ যদি এনশিওর করতে পারে যে তারা গ্রেট প্ল্যানের অংশ হতে প্রস্তুত, সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে আরাকান সহ ত্রিপুরা মণিপুরের গ্রিপ বাংলাদেশের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন, রোহিংগাদের ফিরে যেতে এইযে প্রায় এক বছর সময় বাকি, এই সময়ে বাংলাদেশ কি করতে পারে.?
 
এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশ যেটা করতে পারে তা হলো, বিশাল সংখ্যক রোহিংগা জনগোষ্ঠীর জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের সাথে অস্ত্রশস্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্টিলিজেন্সের ভাষায় এটাকে বলা যেতে পারে- ‛PSYOPS' বা সাইকোলজিক্যাল অপারেশন। এই ট্রেনিংয়ের আন্ডারে তাদেরকে মূলত আইডিওলজিক্যালি অর্গানাইজ করা হবে।
কিরকম..?
 
তাদেরকে একদম ব্রেইনওয়াস করে দিতে হবে যে বাংলাদেশ মানবিকতার খাতিরে এত বছর যাবৎ তাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। খাওয়া দাওয়া, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে ক্ষেত্রবিশেষে নাগরিকত্ব পর্যন্ত তারা পেয়েছে। শিক্ষিতরা বিশেষ বিবেচনায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ পেয়েছে― যার জন্য তারা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। এ কাজের দায়িত্ব ডিজিএফআই এর হিউম্যান ইন্টিলিজেন্স (HUMINT) ডিপার্টমেন্ট সহ সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী নিতে পারে।
 
যদি এই হিউজ ম্যানপাওয়াকে প্রপার্লি ইউটিলাইজ করা যায় তাহলে ইন দ্যা লং রান, তারা কখনোই বাংলাদেশ বিরোধী হবেনা। ঠিক যেই কাজটা চীন করেছে উইঘুরের মুসলিমদের সাথে করেছে। তারা কোনো উইঘুর মুসলিমকে মারেনি কাটেনি। বরং তাদেরকে এমনভাবে ব্রেইনওয়াস করেছে যে, এন্ডগেইম মোমেন্টেও তারা নিজেদেরকে একজন চাইনিজ হিসেবে পরিচয় দিবে এবং চীনের স্বার্বভৌমত্ত্ব রক্ষায় একনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
 
বাংলাদেশ এই কাজটা করতে পারলে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী স্লিপার সেল হিসেবে গড়ে উঠবে। পরবর্তী সময়ে আমরা তাদের নিকট কোনো আরজ নিয়ে গেলে তারা ফেলতে পারবে না, বাংলাদেশের স্বার্থেই কাজ করবে।
সবমিলিয়ে আমাদের সামনের দিনগুলো খুব কঠিন। ঢাকাকে এক হাতে ওয়াশিংটন বেইজিং ব্যালেন্স করতে হবে। স্মার্টলি করতে পারলে অনেক কিছু পাওয়ার আছে, আর বোকার মত কাজ করলে অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে।