
বাংলা আউটলুক'র প্রতিবেদন।। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সময় বলপূর্বক গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার জন্য সমালোচিত হয়ে ওঠে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স বা ডিজিএফআই। গোপন কারাগার (আয়নাঘর নামে পরিচিত) পরিচালনায় তাদের ভূমিকা, ডিজিএফআই-এর খ্যাতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়, বিশেষ করে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার শাসনের পতনের পর। জনসাধারণের ম্যান্ডেট ছাড়াই হাসিনা নিজের শাসনকে টিকিয়ে রাখতে তার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকীর মাধ্যমে ডিজিএফআইকে দমন-পীড়নের একটি হাতিয়ারে রূপান্তর করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এমন উদাহরণও রয়েছে যেখানে ডিজিএফআই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে সম্মত হয়নি। একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ পাওয়া যায় ২০১৮ সালের সমালোচিত মধ্যরাতের নির্বাচনের ঠিক আগে ও পরে।
যখন ডিজিএফআই দৃঢ়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের SS7 মোবাইল নেটওয়ার্কের সঙ্গে লিংক করার জন্য ভারতের বহিরাগত গোয়েন্দা পরিষেবার (ইন্ডিয়ান এক্সটার্নাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস) একটি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল। নির্বাচনের আগে ঢাকায় স্টেশন প্রধানের পক্ষ থেকে প্রথম এই প্রস্তাবে অসম্মতি জানানো হয়। পরপর দুবার তৎকালীন সংস্থার প্রধান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।
ডিজিএফআই পরিকল্পনায় বাধা দিল কেন?
বাংলা আউটলুকের কাছে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে রোমিং চুক্তি না থাকার কারণে ভারত এই লিংকটি চেয়েছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কিত ভয়েস কল ডেটা সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশের SS7 নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ভারতের গোয়েন্দারা। উচ্চ পর্যায়ের সূত্র মারফত জানা গেছে, SS7 লিংকের মাধ্যমে ভারত প্রেরক ও প্রাপকের ফোন নম্বর, সময়, তাদের অবস্থান, কলের সময়কাল এবং অন্যান্য মেটাডেটার মতো বিবরণ সংগ্রহ করতে পারত। ইন্ডিয়ান এক্সটার্নাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস বাংলাদেশে একটি সাবমেরিন ক্যাবল ইন্টারসেপশন সিস্টেম স্থাপনের প্রস্তাব করেছিল।
একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল রুট SMW-4 এবং SMW-5 এর অংশ যেখানে এই ধরনের একটি ইন্টারসেপশন সিস্টেম স্থাপন করা যেতে পারে।প্রাপ্ত নথিগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত ইনস্টলেশনের জন্য দুটি বিকল্প উপস্থাপন করেছিল; হয় তারা সরাসরি প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে আসবে অথবা বাংলাদেশের একটি দল বিষয়টি প্রদর্শনের জন্য ভারতে যেতে পারে। যদি এই সিস্টেমটি ইনস্টল করা হত, তাহলে ভারত বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে যে কোনও ইনকামিং বা আউটগোয়িং ভয়েস কলের পাশাপাশি বাংলাদেশের মধ্যে যে কোনও ভয়েস কলের ডেটা সংগ্রহ করতে সক্ষম হত।
সূত্র মারফত জানা গেছে যে, মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এর তৎকালীন প্রধান মেজর জেনারেল টিএম জোবায়েরের সঙ্গে ডিজিএফআইকে চাপ দিয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দাদের দ্বারা প্রস্তাবিত সিস্টেমটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য। এটি লক্ষণীয় যে, এনএসআই প্রধান জোবায়ের তৎকালীন ‘র’ (RAW) প্রধান সামন্ত কুমার গোয়েলের সঙ্গে একই সময়ে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। সূত্রগুলো থেকে জানা যায় যে, মেজর জেনারেল জোবায়ের গোয়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যিনি পরবর্তীতে তার নিজের সুবিধার্থে এই সম্পর্কটি কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। ডিজিএফআই-তে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘SS7 নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা ঝুঁকিপূর্ণ, যা সরাসরি জাতীয় স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাই আমরা এটি বন্ধ করে দেই।’
ডিজিএফআই-এর একাধিক সূত্র প্রকাশ করেছে যে, কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভারতীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এবং দেশের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করার জন্য কড়া প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে পদোন্নতি আটকে দেয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বদলি। অনুবাদ: মানবজমিন।