Image description

চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। এই মাসকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে তুলতে বর্ণিল আলোকসজ্জা ও রঙিন ব্যানারে সাজানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো। আয়োজন করা হচ্ছে গণইফতার, চলছে কোরআন শিক্ষা কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফিরে আসছে উচ্চ শিক্ষার অঙ্গনগুলোতে। পতিত আওয়ামী জাহিলিয়াতের সময়ে এ চিত্র দেখা যায়নি। বরং প্রায় দেড় দশক এসব আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়েছে।

মহিমান্বিত এই মাসের আত্মশুদ্ধি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। মাসব্যাপী নেওয়া হয়েছে কোরআন শিক্ষা, কোরআন উপহার ও গণইফতারের কর্মসূচি।

রমজান শুরুর প্রাক্কালেই ঢাবি ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে হলে হলে স্থাপন করা হয় রমজানের বিশেষ সাজ, যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয় মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন চাঁদ-তারা, মসজিদের মিনারসহ নানা অনুষঙ্গ। শুরুতে ঢাবির কয়েকটি আবাসিক হলের ফটকে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে ‘আহলান, সাহলান, মাহে রামাদান’ লিখে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। পরে প্রায় সব হলের প্রধান দরজায় হল প্রশাসনের সহযোগিতায় এ ব্যবস্থা করেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী সাজিদ রহমান বলেন, ‘এবারের সাজসজ্জা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আমরা চাই শুধু রমজানেই নয়, জাতীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোয়ও ক্যাম্পাস এমন সৃজনশীলতায় ভরপুর থাকুক।’

তিন যুগ ধরে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে চাকরি করা ফজলুল হক সিকদারের চোখে এক নতুন রমজানের রঙ। তিনি বলেন, ‘আমার চাকরির বয়স ৩৬ বছর চলে। রমজানকে কেন্দ্র করে এবার যেভাবে হলগুলো সাজানো হয়েছে, আগে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি।’

হলের শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু আনন্দ নয়, হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চান তারা।

রমজান উপলক্ষে সাজানো হয়েছে বুয়েটের রশিদ হল। ফেসবুকে ভারতবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় বুয়েটের শের-ই বাংলা ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তার পর থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ধর্মচর্চা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এবার রমজানে রঙিন আলোর অপরূপ সাজে সেজেছে শহীদ আবরার ফাহাদের সেই ছাত্রাবাস। টাঙানো হয়েছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের বাণী। একই ভাবে সেজেছে প্রতিষ্ঠানটির অন্য ছাত্রাবাসগুলোও, যা নিয়ে বেশ উৎফুল্ল শিক্ষার্থীরা।

 

Ru

 

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোকসজ্জা তেমনটা না হলেও রমজান উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। মাসব্যাপী ইফতারের আয়োজন করেছে রাবি প্রশাসন। রয়েছে কিরাত সম্মেলন ও গণইফতার কর্মসূচি। ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ ছাত্র সংগঠনগুলোও আয়োজন করছে গণইফতারসহ নানা কর্মসূচি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন শিক্ষার আসর আয়োজন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। হলে হলে হচ্ছে খতমে তারাবি। বদর দিবস উপলক্ষে রয়েছে কুইজ প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে ইফতারের আয়োজনও করবে সংগঠনটি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে গণইফতার কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রিকেট মাঠে ছেলেদের জন্য এবং উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল গেটে মেয়েদের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর এ আয়োজনে আসরের নামাজের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়।

এদিকে রমজানের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষার সময়সূচিতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। পাঠদানের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই পেছানো হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মোহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রমজানের অনুষ্ঠানগুলোয় কোনো ধরনের রাজনৈতিক বাধা না থাকার কারণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ইফতার ও সাহরির মতো নিরেট ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনে কোনো ধরনের বাধা কাম্য নয়। আগে বাধা ছিল, বর্তমানে ওই পরিস্থিতির অবসান হওয়ায় ক্যাম্পাসে এ ধরনের আয়োজন সুন্দরভাবে করা যাচ্ছে।

ক্যাম্পাসগুলোয় রমজানের গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসগুলোয় কয়েক বছর এমন উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকলে এসব অনুষ্ঠানে আর বাধা আসবে না।