Image description
'ভাই, আমি সুমাইয়াকে মাইরা ফালাইছি, আমি আর বাঁচমু না, আমি আত্মহত্যা করুম'- ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন রমজান আলী। ওপাশ থেকে প্রবাসী সম্বন্ধী হতভম্ব হয়ে শুনছেন, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে শনিবার সকালেই এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে।
 
শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পূর্ব জামালপাড়ার নিজ ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই স্বামী পলাতক ছিল, তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মহেশখালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করেছে।
 
নিহত সুমাইয়া পানিরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে। কয়েক বছর আগেই পূর্ব জামালপাড়ার রাজমিস্ত্রি শ্রমিক রমজান আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান।
 
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইছার হামিদ জানিয়েছেন, সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। ঘরের বাইরে উঠোনে খেলছিল তার দুই বছরের কন্যা শিশু। পাশের নূরানী মাদ্রাসা থেকে ফিরে এসেছিল সাত বছরের ছোট সন্তান সাইফুল ইসলাম। ঘরে ফিরে ভাত চাইতে গিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকতেই তার চিৎকারে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। দেখেন সুমাইয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে খাটে।
 
নিহত সুমাইয়ার দাদা মোহাম্মদ ছৈয়দ কবির জানান, তিন বছর আগে পানিরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে পূর্ব জামালপাড়ার রাজমিস্ত্রি শ্রমিক রমজান আলীর বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। স্বামী রমজান মেজাজি ও সন্দেহপ্রবণ ছিলেন। সামান্য কারণেই সুমাইয়াকে মারধর করতেন। পারিবারিক কলহ দিন দিন বাড়তে থাকে। কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। শুক্রবার (১৪ মার্চ) ভোরে সেই দীর্ঘ নির্যাতনের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে।
 
স্ত্রীকে হত্যার পর রমজান আলী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফোনও বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে মহেশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ কাইছার হামিদের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মরদেহের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়, এটি পরিকল্পিত হত্যা। এরপরই শুরু হয় পুলিশি অভিযান। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
 
রমজান পালানোর সময় তার প্রবাসী সম্বন্ধীকে ফোন করে হত্যার দায় স্বীকার করে। প্রতিবেদকের হাতে থাকা সেই রেকর্ডে শোনা যায়, রমজান বলছে- ও খালি ঝগড়া করত, আমারে শান্তি দিত না। আমি মাথা গরম কইরা মাইরা ফালাইছি… এখন আমি কী করমু? একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের আত্মহত্যার কথাও জানান তিনি।
 
ওসি কাইছার হামিদ বলেন, হোয়ানকে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। মরদেহের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। গ্রেফতার রমজান আলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
 
ব্রেকিংনিউজ