
Sanaullah Patowary (সানাউল্লাহ পাটোয়ারি)
শিবিররা কেন হলে ছাত্রলীগ করতো? ছাত্রদল তখন কী করতো? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জেলা-মহানগরের শিবিররাও কি ছাত্রলীগ করতো?
আসুন উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি:-
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রকাশ্য রাজনীতি করা শিবির-ছাত্রদলের নেতারা হল ছাড়তে বাধ্য হয়। তো তখন হলে কারা অবস্থান নিলো? ছাত্রলীগের সব নেতারা কি হলের বাইরে থেকে এসে হল দখল করেছে? উত্তর হচ্ছে 'না'। বরং হলে থাকা শিবির বা ছাত্রদলের মিডল বা ব্যাক লাইনে থাকা কিছু গুপ্ত ছাত্রলীগই হঠাৎ করে গর্ত থেকে বের হয়ে রাতারাতি ছাত্রলীগের নেতা বনে যায়। কোন্ দলে ছাত্রলীগের পক্ষে গুপ্ত থাকা সম্ভব ছিলো সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন।
তবে কিছু কিছু ছাত্রলীগের নেতা বাইরে থেকেও আসে। তো ছাত্রলীগ যখন হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং হলে পূর্ব থেকে অবস্থান করা সাবেক শিবির-ছাত্রদলের কর্মী বা সমর্থকদের যারা হলে রয়ে গেলো (যারা পূর্বে খুব বেশি হাইলাইট হয়নি), ছাত্রলীগ তাদেরকে গেস্টরুম করানো শুরু করে। তখন সবাই ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম বা মিছিলে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য ছিলো। অবশ্যই সাবেক শিবির-ছাত্রদলের সবাই।
পরবর্তীতে যারা শিবিরের সাথে যোগাযোগ রাখতো তাদের নিয়মিত হারে শিবির নার্সিং করেছে এবং পুরোপুরি ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে দেয় নি। কিন্তু ছাত্রদলের যারা ছিলো এদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের চেয়েও বড় ছাত্রলীগ হয়ে উঠে এবং হলে ফাও খাওয়া থেকে শুরু করে গ্রুপিং, রুম দখল, মারামারিতে মেতে উঠে। এটা কি তাদেরকে দিয়ে ছাত্রদল করিয়েছে? উত্তর হচ্ছে 'না'। বরং ছাত্রদলের তাদের কর্মীদের প্রপার নার্সিং করতে না পারায় তারা নগদ লাভের আশায় ছাত্রলীগ হয়ে যায়।
শিবিরের যারা ছাত্রলীগ করেছে তারা শুধুমাত্র হলে থাকার জন্য যেটুকু করা লাগে সেটুকুই করেছে। তবে হ্যাঁ, কচিৎ দু'-একজনের বিচ্যুতি ঘটেনি তাও নয়, তাদেরকে শিবিরও নিজেদের স্বার্থেই বহিস্কার করেছে।
এখন কথা হচ্ছে শিবির এক দিনের জন্যেও হলে কার্যক্রম বন্ধ করেনি এবং নিজেদের কর্মীদের মান নিয়ন্ত্রণ এবং মানোন্নয়ন নিয়ে পুরো সময়টাতেই কর্মযজ্ঞ ছিলো। কিন্তু ছাত্রদলের ক্ষেত্রে কর্মযজ্ঞটা ঐ লেভেলে ছিলো না, যার কারণে ছাত্রদলের ছেলেরা তখন ছাত্রলীগের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলো।
তবে কিছু ব্যতিক্রমও ছিলো, যাদেরকে গোপনে ছাত্রদলের সাথে যোগাযোগ থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই নির্যাতন করে হল থেকে বের করা হতো, যারা আবার ধরা খাওয়ার আগে ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে একটিভ ছিলো।
তো, বিষয়টি হচ্ছে শিবিরের যারা ছাত্রলীগ করতো তাদের শুধুমাত্র হলে থাকার জন্য যতোটা ছাত্রলীগ করা প্রয়োজন, সেটাই করার অনুমোদন ছিলো। আবার ছাত্রলীগের বাজে আচরণ যেমন ফাও খাওয়া, নেশা করা, অন্যদের উপর অত্যাচার করা এই জাতীয় ছাত্রলীগের আচরণ থেকে বিরত রাখার জন্য নিয়মিত মিটিংগুলোতে একে অপরকে গঠনমূলক সমালোচনা (এহতেসাব) করার নিয়ম ছিলো এবং নিয়মিত কুরআন-হাদীসের উপর প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে মানোন্নয়নের ব্যবস্থাও ছিলো।
হলে শিবিরের ছাত্রলীগ করার বিষয়টি যে নিতান্তই প্রয়োজনকে এড্রেস করে, তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে মহানগর বা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে কখনো শিবির এন্ট্রি নেওয়ার কথা শুনবেন না।
-সানাউল্লাহ পাটোয়ারী
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট