
পিলখানা হত্যা মামলায় সাজার মেয়াদ পূর্ণ করা আসামদিরে মধ্যে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২৩৯ বিডিআর জওয়ানের জামিনের শুনানি শেষ। যাচাই-বাছাই শেষে জামিন বিষয়ে আজ বিকেলে আদেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার সকালে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. ইব্রাহীম মিয়ার আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন আদালতে সাক্ষ্য দেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবু সাঈদ খান। এরপর তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এ নিয়ে মামলায় আদালতে ২৮৭ জন সাক্ষ্য দেন। পিলখানায় হত্যাকাণ্ড বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত জামিন পেয়ে মুক্তি পেয়েছেন ১৭৮ জন।
এদিন শুনানি ঘিরে কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ভিড় করেন বিডিআর জাওয়ানদের স্বজনরা। এ সময় কারাগারে থাকা জাওয়ানদের জামিনের দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা। এদিকে জামিন শুনানি বিলম্বিত হওয়ার জন্য একে অপরকে দায়ী করেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আসামিপক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফায় ৪৬২ জনের জামিন আবেদন করা হয়। এরমধ্য মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আসামিসহ এক আসামির পক্ষে দুই বার জামিন আবেদন দাখিল করেছেন ১৬৫ জন। এগুলো যাচাই বাছাই করতে জামিন আদেশের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় উচ্চ আদালত একটি বিশেষ টার্সফোর্স গঠন করেছেন। সেখানে নতুন করে তদন্ত হচ্ছে। তাই আদালতের উচিত ছিলো টার্সফোর্স কতৃক তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ও সাজার মেয়াদ পূূর্ণ করা আাসামিদের জামিন দেয়া উচিত ছিল।
গত ১৯ জানুয়ারি ১৭৮ জন জন বিডিআর জওয়ানকে জামিন দেন একই আদালত। পরে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগার থেকে কারামুক্ত হন তারা।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে যায়।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
এদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজও শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা।