Image description
♦ অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছে না উন্নয়ন সহযোগীরা, বাড়ছে আর্থিক চাপ ♦ মাদক, খুনাখুনিসহ নানা অপরাধ ক্যাম্পে বিপন্ন পরিবেশ ♦ অগ্রগতি নেই প্রত্যাবাসনে, আসছে নতুন করে

দেশের সামগ্রিক পরিবেশে ত্রিমুখী চাপ সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গা খাত। উন্নয়ন সহযোগীরা প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত অথর্নৈতিক সহায়তা আসছে না। ফলে রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে আর্থিক খাতের ওপর চাপ বাড়ছে। বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় এ খাতের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। খাদ্যসহায়তা কমানোর কারণে রোহিঙ্গা নাগরিকরা নিরাপত্তাকর্মীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছেন কাজের খোঁজে। বাইরে বেরিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এমনকি ক্যাম্পগুলোর ভিতরেও বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বাড়ছে মাদক চোরাচালান, খুন ও হত্যাকান্ডের মতো ভয়ংকর অপরাধ। এতে সেখানকার স্থানীয় পরিবেশও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এদিকে মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের দেখভালের জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে উন্নয়ন সহযোগীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রাখতে পারছে না। ধীরে ধীরে তারা অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে। এতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে বিকল্প অর্থের সংস্থানে। অর্থ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তারা (রোহিঙ্গা) এখন যা পাচ্ছেন, সেটা যথেষ্ট নয়। নতুন করে বরাদ্দ কমে যাওয়ার পরিণাম কী হবে তা অকল্পনীয়। তিনি আরও বলেন, আগামী এপ্রিল থেকে এই সহায়তা কমিয়ে মাথাপিছু ৬ ডলারে নামানোর চিঠি দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এমন সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও কাঙ্ক্ষিত সহায়তা দিচ্ছে না উন্নয়ন সহযোগীরা। তৃতীয় কোনো দেশ বা অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে ৫ আগস্টের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিন আমেরিকা ও চীন। সে প্রতিশ্রুতিরও বাস্তবায়ন নেই গত কয়েক মাসে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ডব্লিউএফপি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এর কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, বিশ্বের যেসব দেশ ও সংস্থা এ খাতের সহায়তা দিয়ে থাকে তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের এমন উদ্যোগে কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ডব্লিউএফপি বলেছে, আমরা স্বীকার করছি, শরণার্থীরা মানবিক ত্রাণের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যার ফলে শরণার্থী পরিবারগুলো তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাবে এবং শিবিরে অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা যাদের থেকে সহায়তা চেয়েছিলাম তাদের থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২০২৩ সালেও মাসিক রেশন কমিয়ে আট ডলার করা হয়েছিল। সে সময় সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। কয়েক মাসের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারীরা সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খান এবং ১৫ শতাংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে।

পরবর্তীতে রেশনের পরিমাণ আবারও আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। কেননা ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এ ইস্যুতে বিদেশি সহায়তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২৩ সালে জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু পাওয়া গেছে মাত্র ৪৪০ মিলিয়ন ডলার। এদিকে ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হলেও পাওয়া গেছে ৫০০ মিলিয়নের মতো। নতুন বছর ২০২৫-এ ১ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। তবে কতটুকু পাওয়া যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও সহায়তার হার বাড়ানোর বিষয়েও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, কাঙ্ক্ষিত হারে সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বৈশ্বিক সংকট।