Image description

‘যারা অন্যায়ভাবে আমাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে, আমি তাদের শাস্তি চাই। আমার পঙ্গুত্বের জীবন অনেক কষ্টের। যে অঙ্গ হারিয়েছে, কেবল সে-ই বোঝে অঙ্গ হারানোর কী বেদনা। ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারি না। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টের।’

কথাগুলো বলেছেন ২০২৪-এর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পা হারানো ইনামুল কাওছার। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ঘুরকা ইউনিয়নের মধ্যপাড়া ভরমোহিনী গ্রামের বাসিন্দা ইনামুল। বর্তমানে কৃত্রিম পায়ে হাঁটার চেষ্টা করছেন। তবে এখনো পরিবারের কাছে নিজেকে বোঝা মনে করছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে ছোট ভাই ও নিজের স্ত্রীর চাকরির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।

ইনামুল বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি হলো, আমার স্ত্রী ও ছোট ভাই আছে। তাদের একটি চাকরির ব্যবস্থা করলে আমি ভালোভাবে চলতে পারব।’

কৃত্রিম পায়ে হাঁটতে পারলেও এখনো অনেক কষ্ট উল্লেখ করে ইনামুল বলেন, ‘একটানা বেশিক্ষণ চলতে পারি না। তবুও এটুকু সুবিধা হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা খুব খুশি। সময় নিয়ে ওদের সঙ্গে হাঁটি। বাড়ির টুকটাক কাজ করতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যারা আমার এমন উপকার করেছেন, তাদের যেন তিনি ভালো রাখেন।’

পা হারানোর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইনামুল জানান, ৪ আগস্ট সলঙ্গাবাজার এলাকায় মিছিল করছিলেন তারা। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। ঠিক সে সময় আচমকা তাকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। একটি গুলি এসে তার ডান পায়ের হাঁটুতে লাগে। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইনামুল। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখান থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এরপর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) ১১ আগস্ট ভর্তি হন। ২৫ আগস্ট চিকিৎসকরা জানান, ইনামুলের পা নষ্ট হয়ে গেছে, কেটে ফেলতে হবে। এরপর অপারেশন করে পা কেটে ফেলা হয়। ‘বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সৌজন্যে কৃত্রিম পায়ে এখন কিছুটা হাঁটতে পারি’ বলে এ সময় উল্লেখ করেন ইনামুল।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ইনামুলের বাবা মারা গেছেন। মা বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকেন। চার বোনের বিয়ের পর মা, ছোট ভাই, স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে ইনামুলের পরিবার। উল্লাপাড়ার সরকারি আকবর আলী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে বাবার রেখে যাওয়া জমিতে চাষাবাদ, গরু পালন আর বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইনামুল। ভালোই চলছিল তার সংসার। এর মধ্যে পা হারানোয় সেই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটেছে। ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম স্নাতক পাস। পারাবারিক কাজকর্মের পাশাপাশি চাকরি খুঁজছেন তিনি। ভাইয়ের একটা চাকরি হলে গোটা পরিবার দুশ্চিন্তামুক্ত হতো।