Image description

‘আমরার মতো মানুষ তো বেকবেলাই (সব সময়) বেকায়দায়। কামাই রোজগার না থাকলে দাম কমে দিলেই কি আর মাগনা দিলেই কি। মাগনা দিলেও তো শরমে আইতাম পারি না। আর কমে দিলে নগদ টেহা থাহে না।

এই রহম একটা অবস্থার মধ্যে আছি কইতামও পারি না সইতামও পারি না। কমে দিলেই কী অইব, গোস্ত কিইন্যা খাওনের বাও নাই’

 

আজ সোমবার (১০ মার্চ) সকালে এ প্রতিনিধির কাছে কথাগুলো বলেন সালেহা বেগম (৫০) নামের এক নারী। রমজান উপলক্ষে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উপজেলা পরিষদের সামনে আজ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সূলভ মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে মাছ-মাংসসহ যাবতীয় পণ্য। এ সব পণ্য অনেকের নাগালে থাকলেও কিনতে পারছেন না অসহায় ও হতদরিদ্র অনেকেই।

সকাল থেকে ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছিল গরুর মাংস। সাধারণ লোকজন ওই মাংস কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লেও পাশেই মুখ ডেকে বা মাস্ক পড়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় অপলক দৃষ্টিতে স্তূপ করা মাংসের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সালেহা। স্বেচ্ছাসেবকরা ওই নারীকে এখানে না দাঁড়িয়ে লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে বলতেই তিনি উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।

জানতে চাইলে সালেহা বেগম জানান, তার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ পৌরশহরের দত্তপাড়া গ্রামে। স্বামী তোরাব আলী অসুস্থ হয়ে ঘরে শয্যাশায়ী। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলেরা বিয়ে করে যে যার মতো সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।

আরেকজন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। নিজে অফিস আদালতে কাজ করে যা পান তা দিয়েই সংসারের ব্যয়, মেয়ের পড়ালেখার খরচ ও স্বামীর চিকিৎসার ব্যয় মেটান তিনি।

 

তিনি আরো জানান, আজ খুব ভোরে খবর পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের সামনে বেশ কয়েকটি গরু জবাই হয়েছে। এই খবরে এসে দেখেন শতশত লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনিও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে জানতে পারেন মাংস ফ্রিতে দিবে না। কমদামে কিনতে হবে। এ কথা জেনে লাইন ছেড়ে পাশে এসে দাঁড়ান তিনি।

লাইন ছেড়ে এখানে কেন দাঁড়ালেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেহেই (সবাই) নিলে পড়ে যদি কিছু পইর‌্যা থাহে, এই আশায়।’ এই কথা বলেই মুখ আড়াল করে তিনি সেখান থেকে দ্রুত চলে যান।