
একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশ তোলপাড়। পারিবারিক শিক্ষার অভাব, অসুস্থ মানসিকতা, দুর্বল আইনকানুনসহ নানা ধরনের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নিকৃষ্ট কাজ বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে ধর্ষণ একটি, যা প্রতিনিয়তই ঘটছে। বাংলাদেশেও দিনে দিনে বাড়ছে ধর্ষণের মতো অপরাধের সংখ্যা।
জনমনে প্রশ্ন উঠছে, কেন বাড়ছে ধর্ষণের মতো পৈশাচিক অপরাধের ঘটনা? এক্ষেত্রে দেশের আইনে শাস্তির বিধান কি অপরাধ বিবেচনায় কম? আর এই অপরাধে শাস্তির বিষয়টি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কেমন? আজকের প্রতিবেদনে জানব ধর্ষণের শাস্তি পৃথিবীর কোন দেশে কেমন।বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর এ আইন পাস করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে।
সৌদি আরবের শরিয়া আইনে ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ এবং এর শাস্তি হিসেবে দোররা মারা থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে দেশটির আইনে অপরাধ সংঘটনের সময় ভুক্তভোগীর বয়স ১৪ বছরের নিচে হলেই কেবল সেটিকে জোরপূর্বক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইরানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ইরানে মোট ২৫০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২ জনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে ধর্ষণের দায়ে।চীনে কোনো নারীকে ধর্ষণ কিংবা ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌনমিলনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে যদি ভুক্তভোগী মারা যান অথবা মারাত্মকভাবে আহত হন। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে তিন বছর থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডের শাস্তি রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০১৮ সালে পাস হওয়া এক নির্বাহী আদেশে ভারতে ১২ বছরের কম বয়সী মেয়ে শিশু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্ষণ প্রমাণিত হলে ন্যূনতম ১০ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে। নরওয়ে ও ইসরায়েল, এই রাষ্ট্রগুলোয় ধর্ষণের সাজা ৪ থেকে ১৫ এবং ৪ থেকে ১৬ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৯৪৯টি, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৮৭২টি, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৫৫৫টি ও ২০২১ সালে ৬ হাজার ৩৪১টি ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে রাজধানী ঢাকায় ৩ হাজার ৪২টি ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে।এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ২ হাজার ৪৭০ জন এবং শিশু ৫৭২ জন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণ মামলা হয়েছে ৫২৩টি। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৪৩০ জন এবং শিশু ৯৩ জন।